ডিবির হাওর

ডিবির হাওর ( Dibir Haor ) : সিলেটের জৈন্তাপুরে জৈন্তরাজ্যের রাজা রাম সিংহের স্মৃতিবিজড়িত ডিবির হাওর, ইয়াম, হরফকাটা কেন্দ্রী বিলসহ রয়েছে চারটি বিল৷ বিলগুলোকে কেন্দ্র করেই নাম করা হয়েছে ডিবির হাওর৷ চারটি বিলের অবস্থান আবার যেখানে-সেখানে নয়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে। রাম সিংহের বিলগুলো শাপলার সিজনে শাপলার রাজ্যে রূপ নেয়৷ বিলে ফুটে থাকে অজস্র লাল শাপলা। লতা- পাতা-গুল্মে ভরা বিলের পানিতে শত-হাজারো লাল শাপলা হার মানায় ভোরের সূর্যের আলোকেও। সবুজ পাতার আচ্ছাদনে ঢাকা পড়েছে বিস্তীর্ণ জলরাশি৷ ভোরের আলোয় শাপলার হাসি আরও আলোকিত করে দেয় বিলগুলোকে৷ প্রকৃতি তার নিজ হাতে লাল শাপলার হাসিতে সাজিয়ে দেয় বিলগুলোকে৷ বেড়াতে আসা যেকোনো ভ্রমণপিপাসুদের মনের দুয়ার খুলে দেবে এই শাপলা বিল।। একটি ধ্বংসপ্রায় মন্দির আছে।


ডিবির হাওরের (Dibir Haor) মাঝে৷ যে কেউ চাইলে মন্দিরটি ঘুরে দেখতে পারেন৷ জৈন্তা রাজ্যের এক রাজাকে এ হাওরে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল। সেই স্মৃতিতেই নির্মিত দুইশত বছরের পুরাতন এ মন্দিরটি এখন জীর্ণ-শীর্ণ। প্রাচীন রাজার স্মৃতিবিজড়িত এ হাওরে শীতকালে থাকে পাখিদের রাজত্ব৷ বিশাল হাওর শুকিয়ে যেটুকু জলাশয় তার ওপরই পাখিদের বিচরণ বেশি। বালিহাঁস, পাতিসরালি, পানকৌড়ি, সাদাবক ও জল ময়ুরীর মতো অতিথি পাখির ডানা ঝাপটায় অন্যরূপে সাঁজে এ হাওর।


সিলেট শহর থেকে ৪২ কিলোমিটারের যাত্রাপথ৷ শাপলার পূর্ণ রুপ দেখতে ভ্রমণপিপাসুদের পৌঁছাতে হবে ভোরে। সূর্যের আলো ফোটার আগেই ফুটন্ত শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। বিলের পাশে মেঘালয়, পাহাড়ের নিচে খাসিয়া সম্প্রদায়ের বসবাস। হরফকাটা ও ডিবি বিলের মধ্যে রয়েছে রাজা রাম সিংহের সমাধিস্থল। দূর পাহাড়ে দেখা মিলবে খাসিয়াদের পান-সুপারির বাগান। প্রকৃতির বুকে শিল্পীর তুলিতে আঁকা এ যেন এক নকশিকাঁথা৷

কখন যাবেন : ডিবির হাওরের লাল শাপলা ফুল সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে দেখতে পাওয়া যায়। নভেম্বর মাস সবচেয়ে ভাল সময়। আর শাপলার রুপ দেখতে হলে সূর্যের আলো ফোটার আগে পৌঁছাতে হবে। খুব ভোরে হাজার হাজার শাপলা বিলের জলে নিজেদের মেলে ধরে আপন সৌন্দর্যের ঝলকানিতে।

যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে বাসে সিলেট : ঢাকার গাবতলী, ফকিরাপুল, সায়দাবাদ এবং মহাখালী বাস টার্মিনাল হতে সকাল থেকে রাত ১২ টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় পরপর গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলি, এনা ইত্যাদি পরিবহণের বিভিন্ন এসি/ নন-এসি বাস সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এসব বাসের ভাড়া ৫৫০ থেকে ১৪০০ টাকার পর্যন্ত।


ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট : কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পারাবত, জয়ন্তিকা, উপবন এবং কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন দিনের বিভিন্ন সময়ে সিলেট অভিমুখে যাত্রা করে। শ্রেণীভেদে এসব ট্রেনে টিকেটের ভাড়া জনপ্রতি ৩২০ থেকে ১০৯৯ টাকা পর্যন্ত।


চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট : চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং উদয়ন এক্সপ্রেস নামে দুইটি ট্রেন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এই দুই ট্রেনের টিকিট কাটতে শ্রেণীভেদে জনপ্রতি ৩৭৫ থেকে ১৩৩৮ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। ট্রেন ছাড়ার সময়, সাপ্তাহিক বন্ধের দিন জানতে এবং অনলাইনে টিকেট বুকিং দিতে ভিজিট করতে পারেন
সিলেট থেকে ডিবির হাওর : সিলেট থেকে বাস, সিএনজি অটোরিকশা কিংবা প্রাইভেট কার ভাড়া নিয়ে জৈন্তাপুরে আসতে হবে। সারা দিনের জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করতে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। জৈন্তাপুর বাজার থেকে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ডিবির হাওর ক্যাম্প চোখে পড়বে। এই ক্যাম্পের পাশ দিয়ে ১ কিলোমিটার দূরত্বে শাপলা বিলের অবস্থান। বাসে করে সিলেটের কদমতলী থেকে ডিবির হাওরে আসতে চাইলে জৈন্তাপুর বাজারে বাস থেকে না নেমে ২ কিলোমিটার সামনে ডিবির হাওর ক্যাম্পের সামনে নামলে গ্রামের রাস্তা ধরে মাত্র ১ কিলোমিটার হাঁটলেই ডিবির বিলে পৌঁছে যাবেন। শাপলা বিলে নৌকায় ঘুরতে চাইলে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া লাগতে পারে।

যেখানে থাকবেন : তামাবিল জৈন্তাপুর রোডে বেশ কিছু রিসোর্ট গড়ে উঠেছে, চাইলে সেইসব রিসোর্টে থাকতে পারবেন অথবা থাকার জন্য সিলেটে ফিরে আসতে পারেন। সিলেট শহরে প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের হোটেল পাওয়া যায়। সিলেটে উল্লেখযোগ্য আবাসিক হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি।
এছাড়া শহরের লালবাজার এলাকায় বেশ কিছু মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ এগুলোতে ৪০০ থেকে ৩০০০ টাকায় সহজেই রাত্রি যাপন করতে পারবেন।


কোথায় খাবেন : শাপলা বিলের কাছাকাছি কোনো রেস্টুরেন্ট নেই তাই প্রয়োজন অনুযায়ী সাথে খাবার পরিবহন করতে পারেন।


সিলেটের দর্শনীয় স্থান : সিলেট জেলা ভ্রমণ করতে গেলে ডিবির হাওড় এর আশেপাশে আরও যা দেখতে পারেন, লালাখাল, তামাবিল, জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, লোভাছড়া ইত্যাদি।

লেখা : শাহাবুদ্দিন শুভ

তথ্য সূত্র :

১. ইন্টারনেট
২. ছবি : ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

About শাহাবুদ্দিন শুভ

Read All Posts By শাহাবুদ্দিন শুভ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *