হামহাম জলপ্রপাত ( Hum Hum Waterfall ) : মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী গহিন অরণ্যে এই জলপ্রপাতটির অবস্থান। মূলত কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে রাজকান্দি বন রেঞ্জের কুরমা বনবিট এলাকার আরো প্রায় দশ কিলোমিটার ভিতরে পড়েছে এই জলপ্রপাতটি। এটি সিলেট বিভাগের দ্বিতীয় জলপ্রপাত।
স্থানীয় পাহাড়ি আদিবাসী সমাজ পানি পড়ার শব্দকে বলে ‘হামহাম’ সেই আদিবাসীদের দেয়া নাম ধারণ করেই দাড়িয়ে আছে জলপ্রপাতটি। এবং এই জলপ্রপাতের পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দুরে রয়েছে ত্রিপুরা আদিবাসী পল্লী। আসলে গত দুই হাজার এগার সালে লোকসমাজের কাছে এই জলপ্রপাতটি আবিষ্কারের আগে লোকচক্ষুর অন্তরালেই ছিল তার অবস্থান। এখন পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হলেও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এবং অধিকন্তু যানবাহন বা মানুষ চলাচলের কোন সুবন্দোবস্ত না থাকার কারণে সাধারণ মানুষের কাছে ততটা পরিচিত হয়ে উঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়নি তার। ১৬০ ফিট উচ্চতার হামহাম জলপ্রপাতে ঝর্ণার বুনো সৌন্দর্য দেখার জন্যে অনেক কষ্ট স্বীকার করে সমগ্র বাংলাদেশ থেকে মানুষ ছুটে আসে। শীতকালে তুলনামূলক পানি অনেক কম থাকে তাই বর্ষা কাল হাম হামের বুনো সৌন্দর্য দেখার উপযুক্ত সময়।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে হাম হাম যেতে হলে শ্রীমঙ্গল হয়ে যাওয়া সবচেয়ে সুবিধাজনক। কমলাপুর বা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন হতে পারাবত, জয়ন্তিকা বা উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে প্রথমে শ্রীমঙ্গল আসা যায়। । ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে সময় লাগে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। আর বাসে করে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যেতে ফকিরাপুল অথবা সায়দাবাদ হানিফ, এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস, এনা ইত্যাদি এসি ও নন এসি বাস পাওয়া যায়। বাসে করে শ্রীমঙ্গল যেতে সময় লাগে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা।
শ্রীমঙ্গল থেকে হামহাম
শ্রীমঙ্গল থেকে সকাল সকাল হামহামে জন্য রওনা দিলে ভাল হয়। প্রথমে আপনাকে কলাবন পাড়ায় যেতে হবে। শ্রীমঙ্গল থেকে কলাবন পাড়া আসা যাওয়া এক গাড়িতে ৩-৫ যেতে পারবেন। এছাড়া যাওয়ার জন্যে আছে জীপ গাড়ি। কলাবন পাড়া পৌঁছে ২০০/৩০০ টাকার মধ্যে একজন ভাল গাইড ঠিক করে নিন। ভ্রমণ সঙ্গীর প্রত্যেকে বাঁশের লাঠি নিতে ভুল করবেন না, আর অবশ্যই জোঁকের কথা মাথায় রাখবেন। কলাবন পাড়া থেকে হামহাম যাবার দুটো ট্রেইল আছে আছে, ঝিরি পথ ও পাহাড়ি পথ। ঝিরি পথে একটু সময় বেশি লাগলেও এই পথের সৌন্দর্য পাহাড়ি পথের চেয়ে অনেক বেশি। তবে বর্ষাকালে ঝিরি পথে অনেক জোঁক থাকে। কলাবন পাড়া থেকে হামহাম যেতে ২-৩ ঘণ্টা লাগবে। তবে পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটার অভ্যাস না থাকলে সময় আরও একটু বেশি লাগতে পারে।
হামহাম ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
* ট্র্যাকিং এর জন্যে ভালো গ্রীপের জুতো ব্যবহার করবেন, বিশেষ করে বর্ষাকালে গেলে।
* ব্যাক-প্যাক যত সম্ভব হালকা রাখবেন।
* সাথে পর্যাপ্ত পানি রাখবেন, প্রয়োজনে সাথে করে স্যালাইন নিতে যাবেন।
* পাহাড়ি উঁচু নিচু পথ, চলার সময় সাবধান থাকবেন।
* ফার্স্ট এইডের জন্যে যা প্রয়োজন সাথে রাখবেন।
* ঝর্ণা ও ট্রেইলে দয়া করে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না।
* স্থানীয় মানুষদের সাথে বন্ধু-সুলভ আচরণ করুন।
* সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন যেন হামহাম থেকে ফিরে আসার পথেই সন্ধ্যা না হয়ে যায়।
লেখা : শাহাবুদ্দিন শুভ
তথ্য সূত্র :
১. বাংলাদেশ ভ্রমণসঙ্গী : মোস্তফা সেলিম, উৎসব প্রকাশন, মার্চ ২০১১, পৃষ্টা ২০৯-২১০
২. সিলেট নিবাস বাংলাদেশ, শামসাদ হসাম, উৎস প্রকাশন, জানুয়ারি ২০১৭, পৃষ্টা ১৬,১৭
৩. ইন্টারনেট
৪. ছবি : ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
আরো পড়ুন ……
1 thought on “হামহাম জলপ্রপাত”