মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত  ( Madhabkunda Jolopropat ) :  একসময় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ছিল সিলেট অঞ্চলের একমাত্র দর্শনীয় জলপ্রপাত কিন্তু ২০১০ সালের শেষের দিকে ‘হামহাম জলপ্রপাত’ নামে আরো একটি প্রাকৃতিক জলপ্রপাত আবিষ্কারের খবর সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্যকে আলাদা বৈশিষ্ট্য দান করেছে। একসময় মাধবকুণ্ডকে বলা হত বাংলাদেশের একমাত্র জলপ্রপাত। এখন অবশ্য দেশের অপর পাহাড়ি অঞ্চলে আরো কিছু জলপ্রপাতের খবর পাওয়া যায় । তবে মাধবকুণ্ড এবং হামহাম এই দুটি জলপ্রপাত পড়েছে বৃহত্তর সিলেট এর মৌলভীবাজার জেলায়।

আদি কথা :  আদম আইল পাহাড় নামে পরিচিত এই পাহাড় কঠিন পাথরে গঠিত এবং এই পাহাড়ের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে গঙ্গা মারা ছড়া। ১২ অক্টোবর ১৯৯৯ সালের এক তথ্য অনুযায়ী গঙ্গা মারায়  প্রবাহিত হয়ে যাওয়া জলধারা প্রায় ১৬২ ফুট উচ্চতা থেকে মাধবছড়া দিয়ে প্রবাহিত হয় এই জলপ্রপাত।

নামকরণ : মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার পাথারিয়া পাহাড়ের প্রায় ৮৩ মিটার উঁচু থেকে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের গড়িয়ে কাহিনি হলো— সিলেটের প্রাচীন এক রাজা ‘গোবর্ধন’ পাথারিয়া পাহাড়ে পড়ার কারণে নিচে সৃষ্টি হয়েছে কুণ্ডের। এই কুণ্ড সম্পর্কে প্রচলিত একটি একটি বিশ্রামাগার নির্মাণের কাজ শুরু করলে একসময় সেখানে তিনি একজন  ধ্যানমগ্ন সন্ন্যাসীর সন্ধান পান। রাজা সেই সন্ন্যাসীর শরণাপন্ন হলে সন্ন্যাসী তাকে উপদেশ দিয়েছিলেন এই কুণ্ডে মাধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে রাজা সন্ন্যাসীকে যেন বিসর্জন দেন। রাজা সন্ন্যাসীর সেই পরামর্শ পালন করতে গেলে তিনবার মাধব, মাধব, মাধব নামে দৈববাণীর সৃষ্টি হয়। কথিত আছে সেই থেকে ঐ জলপ্রপাতটির নামকরণ হয় ‘মাধবকুণ্ড’। অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করেন শিবের পূর্ণ নাম ছিল ‘মাধব’ সেই কারণেও ঐ কুণ্ডের এমন নামকরণ হতে পারে। উল্লেখ্য যে, মাধব তীর্থের জলপ্রপাত যে কুণ্ডের সৃষ্টি করেছে সেই কুণ্ডের পাশেই স্থাপিত হয়েছে একটি শিবমন্দির ।

যেহেতু অপূর্ব সৌন্দর্যমণ্ডিত জলপ্রপাত সমৃদ্ধ ঐ মাধবকুণ্ডটি হিন্দুদের তীর্থস্থান হিসেবে পরিগণিত হলেও দর্শনার্থীদের জন্য হয়ে উঠেছে মনোরম এক আকর্ষণের জায়গা। যে পাথারিয়া পাহাড় থেকে ঐ জলপ্রপাতের উৎপত্তি সেই পাথারিয়া পাহাড়ের আগের নাম ছিল ‘আদম আইর পাহাড়’ এবং ঐ পাহাড়টির অবস্থান সীমান্তবর্তী উপজেলা বড়লেখার আট নম্বর দক্ষিণ ভাগ ইউনিয়নের অধীন গৌরনগর মৌজার অন্তর্গত। পাথারিয়া পাহাড়টি আবার কঠিন শিলা বা পাথরের দ্বারা গঠিত। পাহাড়ের বৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছে প্রাকৃতিক ছড়া। আবার ছড়ার উপরের অংশের নাম ‘গঙ্গামার’ এবং নিচের অংশের নাম ‘আধব ছড়া’। প্রায় দুইশত ফিট উঁচু থেকে নিচে খাড়াভাবে পানি পড়ার কারণেই ঠিক নিচে কুণ্ডের সৃষ্টি হয়েছে। তবে উপর থেকে খাড়াভাবে পড়তে গিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পানির ধারা নিচের দিকে ছুটে আসে। সেই দুই ভাগে বিভক্ত ধারার একটির আকৃতি একটু বড় এবং অন্যটি ছোট আকৃতির হলেও বর্ষা মৌসুমে দুই ধারা একটিতে পরিণত হয়ে বৃহৎ আকার ধারণ করে। মাধবকুণ্ডের ঠিক বিপরীতে একটি গুহার মতো বিশাল গর্ত রয়েছে যার চারদিকে বেষ্টনীর মতো দাঁড়িয়ে আছে পাথারিয়া পাহাড়। ১৯৯৯ সালের পরিচালিত এক জরিপের তথ্য মতে, পতনশীল জলধারার পাশ দিয়ে কুণ্ডের গভীরতাসহ মাধবকুণ্ডের উচ্চতা ১৬২ ফিট।

অবস্থান :  মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ভূগোল এবং দূরত্ব এটির অবস্থান ২৪° ৩৮’২১”N ৯২° ১৩’১৬E এবং প্রায় ২০০ ফুট (৬১ মিটার) উঁচু।  মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে কুলাউড়া, জুরী, কাঁঠালতলী হয়ে ৭০ কিলোমিটার দূরে এবং ঢাকা শহর থেকে ৩৫০কিমি দূরে।

কিভাবে যাবেন : সিলেট বা মৌলভীবাজার থেকে গাড়িতে করে যেতে পারেন। মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার এবং সিলেট থেকে   দূরত্ব ৭২ কিলোমিটার। কুলাউড়া থেকে সিএনজি অটোরিক্সায় করে সরাসরি মাধবকুন্ড যাওয়া যায় । এছাড়া পাবলিক বাসে করেও যাওয়া যায়। বাসে করে যেতে হলে কাঠালতলী বাজারে নেমে সেখান থেকে আবার সিএনজি অটোরিক্সায় করে মাধবকুন্ড যেতে হয় । মাধবকুন্ড পৌঁছে নির্ধারিত প্রবেশ টিকেট কেটে মাধবকুন্ড পর্যটন এরিয়ায় প্রবেশ করতে হয়।

কোথায় থাকবেন : এখানে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার সুবিধার্থে একটি রেস্টুরেন্ট, রেস্ট হাউস ও বসার জন্য কিছু শেড নির্মাণ করেছে। চাইলে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্ট এ থাকতে পারেন।

লেখা : শাহাবুদ্দিন শুভ

তথ্য সূত্র :

১. বাংলাদেশ ভ্রমণসঙ্গী : মোস্তফা সেলিম, উৎসব প্রকাশন, মার্চ ২০১১, পৃষ্টা ২০৬
২. সিলেট নিবাস বাংলাদেশ, শামসাদ হসাম, উৎস প্রকাশন, জানুয়ারি ২০১৭, পৃষ্টা ১৫,১৬
৩. শ্রী হট্টের ইতিবৃত্ত পূর্বাংশ – অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি, পৃষ্ঠা ১৪১, ২৭৭ – ২৮০ প্রকাশক – মোস্তফা সেলিম, উৎস প্রকাশন ২০১৭, পৃষ্টা ৪৩
৪. ছবি : ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

About শাহাবুদ্দিন শুভ

Read All Posts By শাহাবুদ্দিন শুভ

1 thought on “মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *