হবিগঞ্জ জেলার পরিচিতি

একসময় হবিগঞ্জ সিলেট জেলার একটি মহকুমা ছিল । প্রশাসনিক কারণে সিলেটকে চারটি মহকুমায় ভাগ করা হয়েছিল- সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। এই জেলা গুলো নিয়েই বর্তমান সিলেট বিভাগ। সিলেট বিভাগের দক্ষিণ পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলার অবস্থান।

হবিগঞ্জ জেলার নামকরণ :
সুফি সাধক হযরত শাহজালাল (রঃ) এর অনুসারী সৈয়দ নাছির উদ্দিন (রঃ) এর পূণ্যস্মৃতি বিজড়িত খোয়াই, করাঙ্গী সুতাং, বিজনা, রত্না প্রভৃতি নদী বিধৌত হবিগঞ্জ একটি ঐতিহাসিক জনপদের নাম । ঐতিহাসিক সুলতানসী হাবেলীর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ সুলতানের অধঃস্তন পুরুষ সৈয়দ হেদায়েত উল্লাহর পুত্র সৈয়দ হবিব উল্লাহ খোয়াই নদীর তীরে একটি গঞ্জ বা বাজার প্রতিষ্ঠা করেন । তাঁর নামানুসারে হবিগঞ্জ থেকে কালক্রমে তা হবিগঞ্জে পরিণত হয় । ইংরেজ শাসনামলে ১৮৬৭ সালে হবিগঞ্জকে মহকুমা ঘোষণা করা হয় এবং ১৮৭৮ সালে হবিগঞ্জ মহকুমা গঠন করা হয় । আসাম প্রাদেশিক সরকারের ২৭৩ নং নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ১৮৯৩সালের ০৭ এপ্রিল হবিগঞ্জ থানা গঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) এর অফিস স্থাপিত হয় এবং সর্বশেষ ১৯৮৪ সালের ০১ মার্চ ( ১৭ ফাল্গুন ১৩৯০ বাংলা) জেলায় উন্নীত হয় । এর আয়তন ২৬৩৬.৫৮ বর্গকিলোমিটার।


ভৌগোলিক অবস্থান: হবিগঞ্জ জেলার আয়তন: ২৬৩৬.৫৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৫৮´ থেকে ২৪°৪২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০৯´ থেকে ৯১°৪০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সুনামগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্বে মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলা, পশ্চিমে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও কিশোরগঞ্জ জেলা। ভৌগলিক দিক দিয়ে হবিগঞ্জ জেলাকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি উজান অঞ্চল এবং অপরটি ভাটি অঞ্চল।

হবিগঞ্জের উজান অঞ্চল হিসেবে পরিচিত চুনারুঘাট, বাহুবল, মাধবপুর ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলা । এ চার উপজেলায় সমতল ও পাহাড়ি এলাকা থাকায় একে উজান অঞ্চল বলা হয়ে থাকে।

আজমিরিগঞ্জ, বানিয়াচং, লাখাই ও নবীগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশ হাওর অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। উপজেলার নদী-নালা, হাওর-বিলে বেষ্টিত বলে ‘ভাটি অঞ্চল’ নামে পরিচিত।

জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
২৫৩৬.৫৮ ৭৭ ১২৪১ ২০৭৬ ১৯১৬৩৩ ১৫৬৬০৩২ ৬৬৭ ৩৭.৭২
জেলার অন্যান্য তথ্য
উপজেলার নাম আয়তন(বর্গ কিমি) পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
আজমিরিগঞ্জ ২২৩.৯৮ ৬৮ ৮৯ ৯৯২৯৪ ৪৪৩ ৩৫.২৮
চুনারুঘাট ৪৯৫.৪৯ ১০ ১৬৫ ৩৮৬ ২৬৭০৫৬ ৫৩৯ ৩২.৮৭
নবীগঞ্জ ৪৩৯.৬২ ১৩ ২১৮ ৩৫০ ২৮৭০৩০ ৬৫৩ ৩৯.৩৮
বানিয়াচং ৪৮২.২৫ ১৫ ২৩৭ ৩৩৭ ২৬৮৬৯১ ৫৫৭ ৩১.৫৪
বাহুবল ২৫০.৬৬ ১৪৫ ৩৩৭ ১৬৭২৬৫ ৬৬৭ ৩৭.৫০
মাধবপুর ২৯৪.২৮ ১১ ১৮১ ২৬৮ ২৭২৫৭৮ ৯২৬ ৪২.১২
লাখাই ১৯৬.৫৬ ৭০ ৬৩ ১২০৬৭৭ ৬১৪ ২৮.৭৫
হবিগঞ্জ সদর ২৫৩.৭৪ ১০ ১৫৭ ২৪৬ ২৭৫০৭৪ ১০৮৪ ৪৭.০৪

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন
গণকবর ১ (নবীগঞ্জ);
বধ্যভূমি ৩ (মাধবপুর, চুনারুঘাট, বানিয়াচং);
স্মৃতিস্তম্ভ ২ (নবীগঞ্জ, মাধবপুর);
স্মৃতিসৌধ ১ (চুনারুঘাট)।

তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ম্যানেজারের বাংলোর পূর্ব পার্শ্বের স্মৃতিসৌধ : স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে ২, ৩ ও ৪ নম্বর সেক্টরের শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। এর উদ্বোধন করেন সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহ বীর-উত্তম। চা-বাগানের ম্যানেজারের বাংলোর পূর্ব পার্শ্বে ভূমি থেকে ৫’ উঁচুতে ৫′×৫’ একটি বেদির ওপর নির্মিত হয়েছে মূল স্তম্ভটি। বেদির নীচে আছে ১.৫′ উচ্চতার একটি ১০′×৮’ প্ল্যাটফর্ম। বেদির ওপর থেকে মূল স্তম্ভটি দুই স্তরে ১৮.৫′ উঁচু আর বেড় ১০’ স্মৃতিসৌধে প্রবেশের জন্যে ২টি তোরণ রয়েছে। সামনে রয়েছে একটি স্থায়ী বক্তৃতা মঞ্চ ও ছোটো একটি পার্ক আর বাম পাশে রয়েছে একটি লেক।

চীফ অব স্টাফ স্মৃতি ভবন : হবিগঞ্জ শহরের পার্শ্ববর্তী উমেদনগর নামের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের চীফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রবকে সমাহিত করা হয়। খোয়াই নদীতীরে হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ সড়কের পাশে তাঁর কবরের ওপর নির্মিত স্মৃতি ভবনটি ১৫′×১২’ ও ১২′×৯’ মাপের ২টি স্তর বিশিষ্ট বেদির ওপর স্থাপিত। এর মধ্য ভাগে ৬” ব্যবধানে ৩টি স্তর দিয়ে একটি কবরের আকার দেওয়া হয়েছে। চার কোণে ৪টি থামের ওপর নির্মিত চালাটিকে দূর থেকে একটি চারচালা ঘরের মতো মনে হয়। চারদিকে গ্রিল দিয়ে ভবনটিকে সংরক্ষিত করা হয়েছে।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান :
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৭.৭২%; পুরুষ ৪১.৭৬%, মহিলা ৩৩.৬২%। কলেজ ১৯, প্রাইমারি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ১, কারিগরি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৫৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৮৫, কমিউনিটি বিদ্যালয় ২, কিন্ডার গার্টেন ১৭, মাদ্রাসা ১৪০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজ, পানিউমদা রাগীব-রাবেয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আলিফ সোবহান কলেজ, গোবিন্দপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৩২), হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৪৩), রাজার বাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৭), জলসুখ কৃষ্ণগোবিন্দ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৬), মিরাশী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৭), ফকিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯০), এল.আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৬), আদাঐর লোকনাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), নবীগঞ্জ জে.কে উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), দিনারপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), বি কে জি সি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), জে কে এন্ড এইচ কে হাইস্কুল (১৯২৪), জগদীশপুর জে,সি, উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), দক্ষিণাচরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), লস্করপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৪৩), হবিগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৩), উবাহাটা কুদ্রতীয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৮৭০), মিরপুর দাখিল মাদ্রাসা (১৯২০), শানখলা দাখিল মাদ্রাসা (১৯২৮), শায়েস্তাগঞ্জ কামিল মাদ্রাসা, হবিগঞ্জ দারুচ্ছুন্নাৎ সিনিয়র মাদ্রাসা।

শিক্ষার হার : গড় হার ৩৭.৭২%; পুরুষ ৪১.৭৬%, মহিলা ৩৩.৬২%। কলেজ ১৯, প্রাইমারি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ১, কারিগরি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৫৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৮৫, কমিউনিটি বিদ্যালয় ২, কিন্ডার গার্টেন ১৭, মাদ্রাসা ১৪০।

উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজ, পানিউমদা রাগীব-রাবেয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আলিফ সোবহান কলেজ, গোবিন্দপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৩২), হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৪৩), রাজার বাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৭), জলসুখ কৃষ্ণগোবিন্দ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৬), মিরাশী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৭), ফকিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯০), এল.আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৬), আদাঐর লোকনাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), নবীগঞ্জ জে.কে উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), দিনারপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), বি কে জি সি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), জে কে এন্ড এইচ কে হাইস্কুল (১৯২৪), জগদীশপুর জে,সি, উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), দক্ষিণাচরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), লস্করপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৪৩), হবিগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৩), উবাহাটা কুদ্রতীয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৮৭০), মিরপুর দাখিল মাদ্রাসা (১৯২০), শানখলা দাখিল মাদ্রাসা (১৯২৮), শায়েস্তাগঞ্জ কামিল মাদ্রাসা, হবিগঞ্জ দারুচ্ছুন্নাৎ সিনিয়র মাদ্রাসা।

-শাহাবুদ্দিন শুভ

তথ্য সূত্র : ১. বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা – হবিগঞ্জ
২. উইকিপিডিয়া
৩.জেলা তথ্য বাতায়ন
৪. জেলার মানচিত্রের ছবি বাংলাপিডিয়া থেকে নেওয়া।

Facebook Comments Box

About শাহাবুদ্দিন শুভ

Read All Posts By শাহাবুদ্দিন শুভ

1 thought on “হবিগঞ্জ জেলার পরিচিতি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *