একসময় হবিগঞ্জ সিলেট জেলার একটি মহকুমা ছিল । প্রশাসনিক কারণে সিলেটকে চারটি মহকুমায় ভাগ করা হয়েছিল- সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। এই জেলা গুলো নিয়েই বর্তমান সিলেট বিভাগ। সিলেট বিভাগের দক্ষিণ পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলার অবস্থান।
হবিগঞ্জ জেলার নামকরণ :
সুফি সাধক হযরত শাহজালাল (রঃ) এর অনুসারী সৈয়দ নাছির উদ্দিন (রঃ) এর পূণ্যস্মৃতি বিজড়িত খোয়াই, করাঙ্গী সুতাং, বিজনা, রত্না প্রভৃতি নদী বিধৌত হবিগঞ্জ একটি ঐতিহাসিক জনপদের নাম । ঐতিহাসিক সুলতানসী হাবেলীর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ সুলতানের অধঃস্তন পুরুষ সৈয়দ হেদায়েত উল্লাহর পুত্র সৈয়দ হবিব উল্লাহ খোয়াই নদীর তীরে একটি গঞ্জ বা বাজার প্রতিষ্ঠা করেন । তাঁর নামানুসারে হবিগঞ্জ থেকে কালক্রমে তা হবিগঞ্জে পরিণত হয় । ইংরেজ শাসনামলে ১৮৬৭ সালে হবিগঞ্জকে মহকুমা ঘোষণা করা হয় এবং ১৮৭৮ সালে হবিগঞ্জ মহকুমা গঠন করা হয় । আসাম প্রাদেশিক সরকারের ২৭৩ নং নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ১৮৯৩সালের ০৭ এপ্রিল হবিগঞ্জ থানা গঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) এর অফিস স্থাপিত হয় এবং সর্বশেষ ১৯৮৪ সালের ০১ মার্চ ( ১৭ ফাল্গুন ১৩৯০ বাংলা) জেলায় উন্নীত হয় । এর আয়তন ২৬৩৬.৫৮ বর্গকিলোমিটার।
ভৌগোলিক অবস্থান: হবিগঞ্জ জেলার আয়তন: ২৬৩৬.৫৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৫৮´ থেকে ২৪°৪২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০৯´ থেকে ৯১°৪০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সুনামগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্বে মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলা, পশ্চিমে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও কিশোরগঞ্জ জেলা। ভৌগলিক দিক দিয়ে হবিগঞ্জ জেলাকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি উজান অঞ্চল এবং অপরটি ভাটি অঞ্চল।
হবিগঞ্জের উজান অঞ্চল হিসেবে পরিচিত চুনারুঘাট, বাহুবল, মাধবপুর ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলা । এ চার উপজেলায় সমতল ও পাহাড়ি এলাকা থাকায় একে উজান অঞ্চল বলা হয়ে থাকে।
আজমিরিগঞ্জ, বানিয়াচং, লাখাই ও নবীগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশ হাওর অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। উপজেলার নদী-নালা, হাওর-বিলে বেষ্টিত বলে ‘ভাটি অঞ্চল’ নামে পরিচিত।
জেলা | |||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | উপজেলা | পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |
শহর | গ্রাম | ||||||||
২৫৩৬.৫৮ | ৮ | ৪ | ৭৭ | ১২৪১ | ২০৭৬ | ১৯১৬৩৩ | ১৫৬৬০৩২ | ৬৬৭ | ৩৭.৭২ |
জেলার অন্যান্য তথ্য | ||||||||
উপজেলার নাম | আয়তন(বর্গ কিমি) | পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
আজমিরিগঞ্জ | ২২৩.৯৮ | – | ৫ | ৬৮ | ৮৯ | ৯৯২৯৪ | ৪৪৩ | ৩৫.২৮ |
চুনারুঘাট | ৪৯৫.৪৯ | – | ১০ | ১৬৫ | ৩৮৬ | ২৬৭০৫৬ | ৫৩৯ | ৩২.৮৭ |
নবীগঞ্জ | ৪৩৯.৬২ | ১ | ১৩ | ২১৮ | ৩৫০ | ২৮৭০৩০ | ৬৫৩ | ৩৯.৩৮ |
বানিয়াচং | ৪৮২.২৫ | – | ১৫ | ২৩৭ | ৩৩৭ | ২৬৮৬৯১ | ৫৫৭ | ৩১.৫৪ |
বাহুবল | ২৫০.৬৬ | – | ৭ | ১৪৫ | ৩৩৭ | ১৬৭২৬৫ | ৬৬৭ | ৩৭.৫০ |
মাধবপুর | ২৯৪.২৮ | ১ | ১১ | ১৮১ | ২৬৮ | ২৭২৫৭৮ | ৯২৬ | ৪২.১২ |
লাখাই | ১৯৬.৫৬ | – | ৬ | ৭০ | ৬৩ | ১২০৬৭৭ | ৬১৪ | ২৮.৭৫ |
হবিগঞ্জ সদর | ২৫৩.৭৪ | ২ | ১০ | ১৫৭ | ২৪৬ | ২৭৫০৭৪ | ১০৮৪ | ৪৭.০৪ |
হবিগঞ্জে ট্রেজারি লুট (১ এপ্রিল ‘৭১)
১৯৭১ সালে হবিগঞ্জ সিলেট জেলার একটি মহকুমা ছিল। বৃহত্তর সিলেট জেলায় যে চারটি মহকুমা রয়েছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে হবিগঞ্জ। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সিলেট অঞ্চলের রেল, সড়ক ও নৌযোগাযোগ মূলত হবিগঞ্জ মহকুমার ওপর দিয়ে হয়। কুশিয়ারা, সুতং, খোয়াই প্রভৃতি নদী এই মহকুমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত। হবিগঞ্জ মহকুমার দক্ষিণে রয়েছে ভারতীয় সীমান্ত। ফলে অবস্থানগত দিক থেকে হবিগঞ্জ খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে। পাকিস্তান আমলে হবিগঞ্জ শহরে একটি বড় খাদ্যগুদাম গড়ে তোলা হয়। এতে খাদ্যসামগ্রীর বিশাল সমাবেশ ঘটানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের প্রথমদিকে অস্ত্র ও খাদ্য ইত্যাদির অভাব ছিল প্রকট। ২৫ মার্চ বড় বড় শহরে পাকিস্তানিরা যে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল সে খবর বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ২৬ মার্চের মধ্যেই পৌঁছে যায়। হবিগঞ্জের আবালবৃদ্ধবণিতা প্রতিরোধ-দুর্গ তৈরি করতে আরম্ভ করেন। মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত, যিনি পাকিস্তান এফএফ রেজিমেন্টের একজন মেজর ছিলেন, এ সময়ে তিনি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এসে নিজ মহকুমা হবিগঞ্জে তিন মাসের ছুটি ভোগ করছিলেন। পঁচিশ মার্চের কালরাতের পর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আব্দুর রব এমসিএ, জনাব মানিক চৌধুরী এমসিএ, আনসার, মুজাহিদ, পুলিশ, ছাত্র-শ্রমিক একত্রিত হয়ে স্থানীয়ভাবে কিছু ৩০৩ রাইফেল সংগ্রহ করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গ্রহণ করতে মেজর দত্তকে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। কোথাও কোথাও থানা ও ট্রেজারি ইত্যাদি থেকে অস্ত্র তুলে নিয়ে আসা হয়। খাদ্যগুদাম ভেঙ্গে নেয়া হয় চাল-গম ইত্যাদি।
এক পর্যায়ে হবিগঞ্জ ট্রেজারিতে রক্ষিত অস্ত্র লুট করে আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরিকল্পনা করেন সাবেক এমএনএ মোস্তফা আলী, এমএনএ লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুর রব, মেজর সি আর দত্ত প্রমুখ। প্রাক্তন মুজাহিদ আবদুন নূর তাদের সহায়তা প্রদান করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক ১ এপ্রিল অপারেশন চালানো হয় হবিগঞ্জ মহকুমা ট্রেজারিতে। মহকুমা প্রশাসক আকবর আলী খান যিনি একজন সরকারী কর্মকর্তা হয়েও মনেপ্রাণে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতে আগ্রহী ছিলেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের এই অভিযানের পথে কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে ট্রেজারির চাবি তুলে দিয়েছিলেন সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। ফলে বিনা বাধায় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে অস্ত্র সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছিল। আর তা ব্যবহার করা হয়েছিল শেরপুরের ভয়াবহ যুদ্ধে।
হবিগঞ্জ সদর থানা ও বিদ্যুৎ বিভাগের ভবনে অভিযান
১৯৭১ সালের ১৩-১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে হবিগঞ্জের অধিকাংশ এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সৈন্যদেরকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হন। এই সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকিস্তানি সৈন্যরা পালানোর পথ খুঁজতে থাকে। হবিগঞ্জ সদর থানা ও বিদ্যুৎ বিভাগের ভবনে তখন পর্যন্ত রাজাকার ও পাকিস্তানি সৈন্যদের অবস্থান ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা ভবন দুটিতে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করে ৩৫-৪০ জনের একটি দল গঠন করেন। ১৪ ডিসেম্বর প্ল্যাটুন অধিনায়ক হাবিলদার (অব.) সহিদের নেতৃত্বে দলটি বিদ্যুৎ ভবনে অপারেশনের উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি দল খোয়াই নদীর পাড়ে (বর্তমান সদর হাসপাতালের সামনে) থানা ভবনের সামনে অবস্থান গ্রহণ করে। আরেকটি দল বিদ্যুৎ ভবনের উত্তরপূর্ব দিকে অবস্থান নিয়ে দুই দিক থেকে আক্রমণ রচনা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের এই অতর্কিত আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সৈন্যরা পালিয়ে যায়। এই সময় মুক্তিযোদ্ধারা ভবন দুটির ভিতর থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের ফেলে যাওয়া ৭টি ৩০৩ রাইফেল উদ্ধার করেন।
উপরে আলোচ্য যুদ্ধসমূহ ছাড়াও হবিগঞ্জে আরও অনেক ছোটোখাটো যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সব যুদ্ধের বর্ণনা প্রদান করা সম্ভব হয় নি।
হবিগঞ্জ শহর আক্রমণ (নভেম্বর ‘৭১) : হবিগঞ্জ শহরের সঙ্গে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও রেল যোগাযোগ ছিল। এখান থেকে পাকিস্তান বাহিনী আশপাশের বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ করত। সে কারণে হবিগঞ্জ শহর আক্রমণ করা এবং দখল নেয়া মুক্তিবাহিনীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধা ভারতের সিংগিছাড়া থেকে বোরুসীনবাড়ি হয়ে রানীরগাঁও, গাভিগাঁও, পাঁচগাঁও গ্রাম পার হয়ে ঘাটিয়াজুরির মধ্যে দিয়ে মিরপুর নতুন বাজারের দিকে মিরপুর-শ্রীমঙ্গল মহাসড়ক অতিক্রম করে বাহুবল থানার আকিলপুর গ্রামে এক হাজী সাহেবের বাড়িতে রাত্রিযাপন করেন। পরদিন সন্ধ্যার পর বখতারপুর, শুয়াইয়া, রংপুর গ্রামে যথাক্রমে জাফর মেম্বার, হুসেন আলী মাষ্টার ও কালা হাজীর বাড়িতে অবস্থান করেন। এখানে ৫/১৬ দিন থাকার পর ২৮ তারিখ রাতে নৌকাযোগে টঙ্গিরঘাট হয়ে রামপুর বাঁধে আসেন। রামপুর বাঁধকে মিলনস্থল নির্ধারণ করে ৩৩জন মুক্তিযোদ্ধা তিনটি সেকশনে বিভক্ত হয়ে হবিগঞ্জ শহর আক্রমণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। উল্লেখ্য, ২৮ নভেম্বর ঈদগাহ মাঠে কয়েক হাজার লোকের উপস্থিতিতে একটি সমাবেশ হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করে আলবদর ও শান্তি বাহিনী হবিগঞ্জ মহকুমা আহ্বায়ক সৈয়দ কামরুল আহসান। মুক্তিযোদ্ধারা এর প্রতিবাদে তিনটি বাহিনীতে বিভক্ত হয়ে গেরিলা হামলা চালায়। একটি গ্রুপকে থানা ও ওয়্যারলেস আক্রমণের দায়িত্ব দেয়া হয়। দ্বিতীয় গ্রুপটিকে দায়িত্ব দেয়া হয় ওয়াপদা আক্রমণ করবার জন্য। তৃতীয় গ্রুপটিকে দায়িত্ব দেয়া হয় পুরাতন বাজারসহ উমেদনগরে রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করার জন্য।
সাবু মিয়ার গ্রুপ, ওয়ারলেস টাওয়ারে অত্যন্ত সুকৌশলে আক্রমণ করে ধ্বংস করে। আবদুস শহীদের গ্রুপ ওয়াপদা আক্রমণ না করে পানির ট্যাঙ্কি আক্রমণ করে ট্যাঙ্কি উড়িয়ে দেয়। জালালউদ্দিনের গ্রুপ পাকিস্তানি দালাল উমেদনগরের লুদাই হাজীকে ধরে নিয়ে যায় এবং রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ করে। রাত ২টায় একই সঙ্গে তিনটি গ্রুপের মোট ৩৩জন সদস্য এসএমজি, এসএলআর, ২ ইঞ্চি মর্টার, গ্রেনেড, রকেট লাঞ্চার ইত্যাদি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে সমর্থ হন। রাত ৪টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা নির্দিষ্ট স্থানে চলে যান। এই অভিযানে সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান বাচ্চু গাইড হিসেবে সর্বক্ষণিক দায়িত্বে ছিলেন। বলা যায় তাঁর প্রেরণায়ই মুক্তিযোদ্ধারা উল্লেখয়োগ্য ভূমিকা রাখেন।
- মুক্তিযুদ্ধে হবিগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল এবং এই জেলায় অনেকগুলো যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। আমরা এই লেখাতে হবিগঞ্জ সদরের ২/৩ যুদ্ধের কথা উল্লেখ্য করেছি। অন্য থানার যুদ্ধ গুলো সংশ্লিষ্ট থানার লেখাতে পাবেন।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন
গণকবর ১ (নবীগঞ্জ);
বধ্যভূমি ৩ (মাধবপুর, চুনারুঘাট, বানিয়াচং);
স্মৃতিস্তম্ভ ২ (নবীগঞ্জ, মাধবপুর);
স্মৃতিসৌধ ১ (চুনারুঘাট)।
তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ম্যানেজারের বাংলোর পূর্ব পার্শ্বের স্মৃতিসৌধ : স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে ২, ৩ ও ৪ নম্বর সেক্টরের শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। এর উদ্বোধন করেন সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহ বীর-উত্তম। চা-বাগানের ম্যানেজারের বাংলোর পূর্ব পার্শ্বে ভূমি থেকে ৫’ উঁচুতে ৫’×৫’ একটি বেদির ওপর নির্মিত হয়েছে মূল স্তম্ভটি। বেদির নীচে আছে ১.৫’ উচ্চতার একটি ১০’×৮’ প্ল্যাটফর্ম। বেদির ওপর থেকে মূল স্তম্ভটি দুই স্তরে ১৮.৫’ উঁচু আর বেড় ১০’। স্মৃতিসৌধে প্রবেশের জন্যে ২টি তোরণ রয়েছে। সামনে রয়েছে একটি স্থায়ী বক্তৃতা মঞ্চ ও ছোটো একটি পার্ক আর বাম পাশে রয়েছে একটি লেক।”
চীফ অব স্টাফ স্মৃতি ভবন: হবিগঞ্জ শহরের পার্শ্ববর্তী উমেদনগর নামের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের চীফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রবকে সমাহিত করা হয়। খোয়াই নদীতীরে হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ সড়কের পাশে তাঁর কবরের ওপর নির্মিত স্মৃতি ভবনটি ১৫’×১২’ ও ১২’×৯’ মাপের ২টি স্তর বিশিষ্ট বেদির ওপর স্থাপিত। এর মধ্য ভাগে ৬” ব্যবধানে ৩টি স্তর দিয়ে একটি কবরের আকার দেওয়া হয়েছে। চার কোণে ৪টি থামের ওপর নির্মিত চালাটিকে দূর থেকে একটি চারচালা ঘরের মতো মনে হয়। চারদিকে গ্রিল দিয়ে ভবনটিকে সংরক্ষিত করা হয়েছে।”
‘দুর্জয়’: মুক্তিযুদ্ধে হবিগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদদের স্মরণে একটি স্মারক ভাস্কর্য নির্মাণের পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৯১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। হবিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভাস্কর্যটির নামকরণ করে ‘দুর্জয়’। হবিগঞ্জ পৌর পার্কে নির্মিত দুর্জয়ের সিঁড়ি ও বেদি সিরামিক ইটের তৈরি। এর ১১টি সিঁড়ি ১১টি সেক্টরের স্মারক ও ৩টি স্তম্ভ ৩০ লাখ শহিদের স্মারক হিসেবে বোঝানো হয়েছে। প্রতিটি স্তম্ভের মাঝে ৩’ দূরত্ব রাখা হয়েছে। স্তম্ভ ৩টি যথাক্রমে ৩০’, ২৭’ ও ২৪’ উঁচু।
হবিগঞ্জ কোর্ট ভবনের স্মৃতিসৌধ: হবিগঞ্জের শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে হবিগঞ্জ সদর কোর্ট ভবনের পূর্ব পার্শ্বে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।
দর্শনীয় স্থান : শংকরপাশা শাহী মসজিদ, চা বাগান, তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ম্যানেজারের বাংলোর পূর্ব পার্শ্বের স্মৃতিসৌধ, বিপিন পালের বাড়ি, এম এ রবের সমাধি, হাবিব খা’র রাজবাড়ি, সুলতানশী হাবেলি, সাতছড়ি বন, রেমা কালেঙ্গা , সাগর দীঘি, বিথঙ্গলের আখড়া, সৈয়দ নাসিরউদ্দন (র.) মাজার, হাওড়, শাহজিবাজার ফ্রুটস ভ্যালি, , রামনাথ বিশ্বাসের ভিটা, রশিদপুর গ্যাসফিল্ড, বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড, শেখ বানুর মাজার।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান :
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৭.৭২%; পুরুষ ৪১.৭৬%, মহিলা ৩৩.৬২%। কলেজ ১৯, প্রাইমারি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ১, কারিগরি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৫৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৮৫, কমিউনিটি বিদ্যালয় ২, কিন্ডার গার্টেন ১৭, মাদ্রাসা ১৪০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজ, পানিউমদা রাগীব-রাবেয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আলিফ সোবহান কলেজ, গোবিন্দপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৩২), হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৪৩), রাজার বাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৭), জলসুখ কৃষ্ণগোবিন্দ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৬), মিরাশী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৭), ফকিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯০), এল.আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৬), আদাঐর লোকনাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), নবীগঞ্জ জে.কে উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), দিনারপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), বি কে জি সি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), জে কে এন্ড এইচ কে হাইস্কুল (১৯২৪), জগদীশপুর জে,সি, উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), দক্ষিণাচরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), লস্করপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৪৩), হবিগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৩), উবাহাটা কুদ্রতীয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৮৭০), মিরপুর দাখিল মাদ্রাসা (১৯২০), শানখলা দাখিল মাদ্রাসা (১৯২৮), শায়েস্তাগঞ্জ কামিল মাদ্রাসা, হবিগঞ্জ দারুচ্ছুন্নাৎ সিনিয়র মাদ্রাসা।
শিক্ষার হার : গড় হার ৩৭.৭২%; পুরুষ ৪১.৭৬%, মহিলা ৩৩.৬২%। কলেজ ১৯, প্রাইমারি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ১, কারিগরি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৫৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৮৫, কমিউনিটি বিদ্যালয় ২, কিন্ডার গার্টেন ১৭, মাদ্রাসা ১৪০।
উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজ, পানিউমদা রাগীব-রাবেয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আলিফ সোবহান কলেজ, গোবিন্দপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৩২), হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৪৩), রাজার বাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৭), জলসুখ কৃষ্ণগোবিন্দ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৬), মিরাশী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৭), ফকিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯০), এল.আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৬), আদাঐর লোকনাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), নবীগঞ্জ জে.কে উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), দিনারপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), বি কে জি সি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), জে কে এন্ড এইচ কে হাইস্কুল (১৯২৪), জগদীশপুর জে,সি, উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), দক্ষিণাচরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), লস্করপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৪৩), হবিগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৩), উবাহাটা কুদ্রতীয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৮৭০), মিরপুর দাখিল মাদ্রাসা (১৯২০), শানখলা দাখিল মাদ্রাসা (১৯২৮), শায়েস্তাগঞ্জ কামিল মাদ্রাসা, হবিগঞ্জ দারুচ্ছুন্নাৎ সিনিয়র মাদ্রাসা।
-লেখা : শাহাবুদ্দিন শুভ
তথ্য সূত্র :
১. বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা – হবিগঞ্জ
২. উইকিপিডিয়া
৩. জেলা তথ্য বাতায়ন
৪. শ্রী হট্টের ইতিবৃত্ত পূর্বাংশ – অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি, পৃষ্ঠা ৩০-৩৯ প্রকাশক – মোস্তফা সেলিম, উৎস প্রকাশন ২০১৭
৫. সিলেট বিভাগের প্রশাসন ও ভূমি ব্যবস্থা ,মোঃ: হাফিজুর রহমান ভূঁইয়া, সেপ্টেম্বর ১৯৯৮, পৃষ্ঠা ৪৮,
৬. বাংলাদেশ ভ্রমণ সঙ্গী, মোস্তফা সেলিম, উৎস প্রকাশন, দ্বিতীয় সংস্করণ ২০১৩, পৃষ্টা ২১৭-২২১
৭. বাংলাদেমের স্বাধীনতা যুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ৪, মার্চ ২০০৬, পৃষ্ঠা ২৬,২৭,৩৭, ২১৩, ২৪৪-২৪৫,
৮. মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস, – সিলেট, লে. কর্ণেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, বীরপ্রতীক, বাংলা একাডেমী, এপ্রিল ২০১৮ পৃষ্ঠা ২৯৬-২৯৮, ১৩৬-১৩৭
৯. তাজুল মোহাম্মদ, সিলেটের যুদ্ধকথা, সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩, পৃ. ২২)।
১০. মানচিত্রের ছবি বাংলাপিডিয়া থেকে নেওয়া।
1 thought on “হবিগঞ্জ জেলার পরিচিতি”