জালুখালি নদী ( চলতি নদী )

জালুখালি বা জালুখালী বা চলতি বা ধামালিয়া বা উমগি বা উম্বাহ নদী (ইংরেজি: Zalukhali River , খাসিয়া: ওয়াহ উমগি) বাংলাদেশ ও মেঘালয়ের একটি আন্তঃ সীমান্ত নদী। নদীটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম খাসি পাহাড় জেলা ও দক্ষিণ পশ্চিম খাসি পাহাড় জেলা এবং বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার একটি নদী। জালুখালি নদীকে স্থানীয় ভাবে চলতি নদীও বলা হয়ে থাকে।


জালুখালি নদীটির দৈর্ঘ্য ১৪ কিলোমিটার, প্রস্থ ২০১ মিটার, অববাহিকার আয়তন ৩০ বর্গকিলোমিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পাউবো কর্তৃক জালুখালি নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর- পূর্বাঞ্চলের নদী নং ৩২। মৌসুমি প্রকৃতির এই নদীতে ১২ মাস পানিপ্রবাহ থাকে না। জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে কম প্রবাহ থাকে, যার আনুমানিক পরিমাণ ৩০ ঘনসেন্টিমিটার/সেকেন্ড। কিন্তু জুলাই আগস্টে এই পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫০ ঘসেন্টিমিটার/সেকেন্ড পৌঁছায়। নদীটিতে জোয়ার ভাটার প্রভাব নেই। বর্ষায় সাধারণত বন্যা হলেই নদীর পাড় ভেসে পার্শ্ববর্তী বাড়িঘর ফসলের ক্ষতি সাধিত হয়।

প্রবাহ: জালুখালি নদীটি মেঘালয়ের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় হতে উৎপত্তি হয়ে দক্ষিণমুখে প্রবাহিত হয়ে সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অতঃপর একই জেলার সদর উপজেলার লাকমানশ্রী ইউনিয়ন অবধি প্রবাহিত হয়ে সুরমা নদীতে পতিত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীটির উজানের ভারতের নিকটবর্তী অংশ সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে সুরমা নদীতে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে তার প্রভাবে এই নদীতেও পানি বৃদ্ধি পায় এবং সে সময় সুরমার প্রভাবে এই নদীর স্রোত বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। চন্দ্র-সূর্যের প্রভাবের কারণে এই নদীর পানি দুদিকেই প্রবাহিত হয়। জালুখালি নদীর পলি বালু হিসেবে উৎকৃষ্ট এবং এ কারণে সুরমার সাথে এর মিলনস্থলের তীরে গড়ে উঠেছে বালির আড়ত। সিলেট বালু খ্যাত এই বালি দেশের বিভিন্ন স্থানে এখান থেকেই ট্রলারে করে পরিবাহিত হয়।

নদীতে সারাবছর কমবেশি নৌকা চলাচল করে। তবে বর্ষা মৌসুমে নৌকা চলাচল প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পায়। বর্ষায় নদীতে পানির প্রবাহ এবং ভাঙন প্রবণতা বেড়ে যায়। এই ভাঙনের ফলে নদীর প্রশস্ততা বৃদ্ধি পেলেও পূর্বের তুলনায় তলদেশ অনেকটা ভরাট হয়েছে।

উৎস : ভারত
পতিত মুখ : নদী
ধলা নদীর তীরবর্তী বাজার সমূহ : ঝিনারপুর ও মনিপুর হাট।
প্রবাহিত জেলা : সুনামগঞ্জ
প্রবাহিত উপজেলা : সুনামগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুর
নদীর দৈর্ঘ্য : নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪ কিমি
প্রশস্ত : গড় ২০১ মিটার
অববাহিকার আয়তন : ৩০ বর্গ কি.মি.
প্রকৃতি : সর্পিল আকার
বন্যা প্রবণতা : বন্যা প্রবণ
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ : প্রযোজ্য নয়

পানি প্রবাহের পরিমাণ : জানুয়ারি -ফেব্রুয়ারি মাসে আনুমানিক ৩০ ঘনমিটার /সেকেন্ড । জুলাই- আগস্ট মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫০ ঘন মিটার /সেকেন্ডে পৌছায় ।

নৌ-রোড : নদীটি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃক নির্ধারিত নৌ রোডের তথ্য উল্লেখ্য নেই।

নদী নং : বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক ধলা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ৩২ ।

লেখা : শাহাবুদ্দিন শুভ

তথ্যসূত্র:
১. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি, কথাপ্রকাশ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, পৃষ্ঠা ১৯১, ১৯২ ।
পৃষ্ঠা ২৩০,
২. ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ২০৭।
৩. বাংলাদেশের নদ নদী , ম ইনামুল হক, জুলাই ২০১৭, অনুশীলন, পৃষ্ঠা ৫৪-৫৫,

About শাহাবুদ্দিন শুভ

Read All Posts By শাহাবুদ্দিন শুভ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *