গোলাপগঞ্জ উপজেলা Golapganj :: গোলাপগঞ্জ উপজেলা (সিলেট জেলা) আয়তন: ২৭৮.৩৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪১´ থেকে ২৪°৫৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫৫´ থেকে ৯২°০৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সিলেট সদর, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলা, দক্ষিণে ফেঞ্চুগঞ্জ ও বড়লেখা উপজেলা, পূর্বে বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা উপজেলা, পশ্চিমে সিলেট সদর উপজেলা।
নামকরণ :হযরত শাহজালালের (র:) অন্যতম সহচর হযরত সৈয়দ বাহাউদ্দিন (র:), উপমহাদেশে বৈষ্ণব ধর্মের মহান সাধক ও সংস্কারক শ্রীচৈতন্য সহ অসংখ্য পীর আউলিয়ার পদস্পর্শে ধন্য । গোলাপগঞ্জ ও তৎসংলগ্ন বিভিন্ন অঞ্চলের নামকরণের কোন প্রামাণ্য দলিল অদ্যাবধি পাওয়া যায়নি। জনশ্রুতি ও কিংবদন্তীর উপর ভিত্তি করে গোলাপগঞ্জ উপজেলার নামকরণের ইতিহাস তুলে ধরা হলো । মুঘল শাসনামলে সম্রাট মুহম্মদ শাহ (১৭১৯-৪৮) এর রাজত্বকালে আনুমানিক ১৭৪০ সালে অল্পকালের জন্য সিলেটের দেওয়ান (রাজস্ব কর্মকর্তা) নিযুক্ত হয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে সিলেট আসেন গোলাব রাম (মতান্তরে গোলাব রায়)। এ সময় সিলেট অঞ্চলের ফৌজদার ছিলেন সমসের খান এবং বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন সুজা উদ্দিন খান । দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এই ধর্মপ্রাণ দেওয়ান গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিনে শ্রী চৈতন্যের পিতৃভূমি সম্পর্কে অবগত হন। দেওয়ানের নির্দেশে সিলেট থেকে ঢাকাদক্ষিন পর্যন্ত সড়ক ও সেতু নির্মিত হয়। এ সড়ক পথে ঢাকাদক্ষিণ এসে দেওয়ান শ্রী চৈতন্যের পিতৃভূমিতে এক মন্দির স্থাপন করেন, এর সমনে এক দীঘি খনন করান । হেতিমগঞ্জ থেকে ঢাকাদক্ষিণ গামী সড়কটি আজো দেওয়ান সড়ক নামে পরিচিত । এ সড়কে দেওয়ানের পুল নামে একটি প্রাচীন কালভার্ট আজ ও বর্তমান। ধারনা করা হয় এই দেওয়ানের নামানুসারেই সুরমা নদী তীরে গোলাবগঞ্জ নামে এক বাজার গড়ে ওঠে যা কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে গোলাবগঞ্জ নাম ধারণ করে। গোলাপগঞ্জের প্রাচীন দলিল ও রেকর্ডপত্রে গোলাবগঞ্জ নামটি এরই সাক্ষ্য বহন করে।
প্রশাসনিক ইউনিট হিসাবে গোলাপগঞ্জ: পাঠান যুগে এবং তৎপরবর্তী মুঘল যুগে গোলাপগঞ্জে কোন প্রশাসনিক কেন্দ্র থাকার বিবরণ পাওয়া যায় না । মুঘল যুগে এ অঞ্চলের ঢাকাদক্ষিনে রাজস্ব আদায়-উসুলের ব্যবস্থা ছিল বলে জানা যায় । তখন এ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতেন দিল্লী সম্রাটের সনদ প্রাপ্ত চৌধুরী গণ । পরবর্তীতে ইংরেজ শাসনামলে প্রথমে থানা প্রশাসন ছিল হেতিমগঞ্জে। ১৯০৬ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকার সুরমা তীরবর্তী গোলাপগঞ্জ বাজারের সন্নিকটে থানা কার্যালয় স্থানান্তর করেন।
উপজেলা
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা শহর | জনসংখ্যা গ্রাম | (প্রতি বর্গ কিমি) |
১ | ১১ | ১০৮ | ২৫৬ | ১৮০৬০ | ২৪৫৮৯৩ | ৯৪৮ |
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গকিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) |
১১.১৪ | ৪ | ১৮০৬০ | ৯৪৮ |
ইউনিয়ন সমূহের তথ্য
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | পুরুষ | মহিলা | শিক্ষার হার (%) |
আমুরা ০৬ | ৫০১০ | ৭৯১১ | ৭৮৯২ | ৪৯.০৮ |
উত্তর বাদেপাশা ৭৭ | ৫৪২৮ | ৯১০৭ | ৯৪৬৬ | ৪৪.৫০ |
গোলাপগঞ্জ ৫১ | ৫৫৬১ | ১৫৬৪১ | ১৫৩৫০ | ৫৭.২৭ |
ঢাকা দক্ষিণ ২৫ | ৫৩৪৯ | ১৪২৯২ | ১৪১৬৭ | ৫০.৪৩ |
বাঘা ০৮ | ৯৭৭০ | ১৪১৫০ | ১৪২৭২ | ৩৭.১৭ |
বুধবারী বাজার ২০ | ২৮০৭ | ৭৮৬৮ | ৮১৯১ | ৫০.১৮ |
ভাদেশ্বর ১৭ | ৮১৩১ | ১৫৫৬২ | ১৫৬৬৩ | ৫১.৮৫ |
লক্ষণাবন্দ ৬৯ | ৬৮৪১ | ১২৭৩৫ | ১২৫৫৬ | ৪৬.২৪ |
লক্ষীপাশা ৬০ | ৪৭০৬ | ১০৫৬৮ | ১০৪৪২ | ৫৩.৬৩ |
শরীফগঞ্জ ৩৬ | ৪৯১৩ | ৯৫২৫ | ৯৫৩৯ | ৩৬.৬৮ |
ফুলবাড়ী ৪৩ | ৫২৪৬ | ১৪৮৩০ | ১৪২২৬ | ৪৮.৯৫ |
প্রধান নদ-নদী : সুরমা, কুশিয়ারা ও সোনাই নদী ,
জলাশয় ও বিল : বাঘা, ফাটামাটি, পারইয়া ও সোনাডুবি বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন : গোলাপগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯২২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্ন সম্পদ : হযরত বাহাউদ্দিন(র) মাজার, শ্রীচৈতন্যদেবের বাড়ি ও মন্দির, কৈলাশটিলা ও দেওয়ানের পুল।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি: ঐতিহাসিক নানকার বিদ্রোহের অংশ হিসেবে এখানে রণিকেলী বিদ্রোহ ও ভাদেশ্বর বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন : গণকবর ১ (সুন্দিশাইল), স্মৃতিস্তম্ভ ১ (উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার)।
সুন্দিশাইল শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ : ১৯৭১ সালের ২৪ শে অক্টোবর পাকিস্তান সেনাবাহিনী গোলাপগঞ্জ থানার সুন্দিশাইল গ্রামে আক্রমণ করে হত্যা করে ১৮ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে। এর ও আগে এখানে সম্মুখ যুদ্ধে শহিদ হন ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা। সামনের দিকে ২ফুট ৭ ইঞ্চি বাই ১ফুট ৩ ইঞ্চি মার্বেল পাথরে লেখা আছে ২৫-২৬ অক্টোবর ১৯৭১ সাল তারিখে চিরঞ্জীব শহিদদের অমর স্মৃতিতে স্থাপিত, ১৯৭৩ ইংরেজি স্থান সুন্দিশাইল। অজ্ঞাত ৫ জনসহ ১৮ জন শহিদের নাম খোদাই করা হয়েছে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান : মসজিদ ৪৪৫, মন্দির ৩, গির্জা ১, মাযার ৯। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ভাদেশ্বর মোকাম বাজার জামে মসজিদ।
শিক্ষা : শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৮.২৪%; পুরুষ ৫০.৮৯%, মহিলা ৪৫.৬৪%।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : কলেজ ৩, কারিগরি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬০, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১৫, কিন্ডার গার্টেন ৬০, মাদ্রাসা ১৯।
উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ঢাকা দক্ষিণ ডিগ্রী কলেজ, ভাদেশ্বর মহিলা ডিগ্রী কলেজ, ঢাকা দক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (১৮৯৮), ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), এমসি একাডেমী (১৯৩৪), ফুলবাড়ীয়া মাদ্রাসা (১৮৮২)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৫, সংগীত একাডেমি ৫, কমিউনিটি সেন্টার ১২, খেলার মাঠ ১০।
দর্শনীয় স্থান : বাংলাদেশ স্কাউট সিলেট অঞ্চল, পেট্রোবাংলা, কৈলাশ টিলা, শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মস্থান।
উল্লেখযোগ্য বাজার : গোলাপগঞ্জ, কুড়ের বাজার, চন্দরপুর, ঠাকুর বাড়ি, পুরকায়স্থবাজার, পূর্ব ভাগবাজার, ভাইয়ার বাজার, ভায়ইয়ার (পুরাতন), রাখালগঞ্জ
লেখা : শাহাবুদ্দিন শুভ
তথ্য সূত্র :
১. বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা সিলেট, জুন ২০১৪, বাংলা একাডেমী পৃষ্ঠা ৩৪
২. সিলেটের ইতিহাস, কমল চৌধুরী, দে’জ পাবলিকেশন কলকাতা,জানুয়ারি ২০১২, পৃষ্ঠা ৫০
৩. সিলেট বিভাগের প্রশাসন ও ভূমি ব্যবস্থা ,মোঃ: হাফিজুর রহমান ভূঁইয়া, সেপ্টেম্বর ১৯৯৮, পৃষ্ঠা ৭১,
৪. জনসংখ্যা ২০০১ সালের শুমারী অনুযায়ী
৫. স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য: তথ্য বাতায়ন ২০.০৮.২০১৯
৬. আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গোলাপগঞ্জ উপজেলার মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০১০।
৭. মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস, – সিলেট, লে. কর্ণেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, বীরপ্রতীক, বাংলা একাডেমী, এপ্রিল ২০১৮ পৃষ্ঠা ৫৯, ২৯১
৮. উইকিপিডিয়া
৯. জেলা তথ্য বাতায়ন
১০. গোলাপগঞ্জের মানচিত্র বাংলা পিডিয়া থেকে
আরো পড়ুন