সিলেটের তথ্য বাতায়ন ‘সিলেটপিডিয়া’ : ঢাকা টাইমস

১৬জানুয়ারি সিলেটপিডিয়াকে নিয়ে একটি ফিচার নিউজ করে ঢাকা টাইমস। তারা তাদের প্রযু্ক্তি বিভাগে লেখে সিলেটের তথ্য বাতায়ন ‘সিলেটপিডিয়া’

আধুনিক যুগে তথ্য-প্রযুক্তি আমাদের জীবনব্যবস্থা কতই না সহজ করে দিয়েছে। মানুষ এখন ঘরে বসেই জানতে পারছে পৃথিবীর সকল খবরাখবর। জ্ঞানপিপাসু মানুষ এ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই ডুবে যেতে পারেন জ্ঞানের সাগরে। ভ্রমণ প্রিয় মানুষ তার পছন্দের স্থান নির্ধারণ করতে পারেন সহজেই। কোথায় যাবেন, কীভাবে যাবেন, দূরত্ব কতটুকু, থাকা-খাওয়ার সুবিধা কেমন সবকিছুই সহজে জেনে যাচ্ছেন ঘরে বসেই।

মানুষকে তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে দারুণ ভূমিকা পালন করছে উইকিপিডিয়া। ২০০১ সাল থেকে যাত্রা শুরু করা সংস্থাটি প্রায় ৩০১টি ভাষায় মানুষকে বিস্তর তথ্য সেবা প্রদান করে আসছে। তবে ক্ষুদ্র অঞ্চলভেদে উইকিপিডিয়ায় খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। আর সে বিষয়টি ভালোভাবেই নজর কেড়েছে সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার শাহাবুদ্দিন শুভর।

তাইতো উইকিপিডিয়ার আদলে নিজ বিভাগ নিয়ে তিনি শুরু করেছেন ‌‘সিলেটপিডিয়া’। যেখানে সিলেটের প্রায় ২৫০ বছরের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। রয়েছে সিলেটের প্রত্যেকটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামের বর্ণনা।

বাংলাদেশের চায়ের শহর সিলেট। ১২ হাজার ৫৫৮ বর্গ কিলোমিটারের এ বিভাগে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ১৩৫টি। সুরমা, কুশিয়ারা, কালনী, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই, সুতাং, রত্না সবই সিলেট বিভাগে অবস্থিত। সিলেটপিডিয়ায় বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে এ সকল নদ-নদী নিয়ে।

এছাড়াও দেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সিলেট। হযরত শাহজালাল (র.) এবং হযরত শাহপরাণ (র.) এর মাজার, জাফলং, শ্রীপুর, তামাবিল, ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারী, লাক্কাতুরা চা বাগান, বিছনাকান্দি, খাসিয়াপুঞ্জি, রাতারগুল, টাঙ্গুয়ার হাওর, হাছন রাজার বাড়ী, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, চা গবেষণা ইন্সটিটিউট, লাউয়াছড়া, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানসহ এ বিভাগের সকল দর্শনীয় স্থানসমূহের বর্ণনা রয়েছে সিলেটপিডিয়া।

একজন দর্শনার্থী কীভাবে যাবে, কোথায় থাকবে, ওখানকার বিখ্যাত সব খাবার সবকিছুই তুলে ধরা হয়েছে সিলেটপিডিয়ায়।

কীভাবে সিলেটপিডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করলেন শাহাবুদ্দিন শুভ? এমন প্রশ্নের জবাবে এই উদ্যোক্তা বলেন, যেহেতু সাংবাদিকতা ও লেখা-লেখির সঙ্গে দেড় যুগের বেশি সময় ধরে জড়িত এবং নতুন বিষয় জানা ও পড়ার প্রতি আগ্রহ সেই ছোটবেলা থেকে। সে কারণে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যখন তথ্যের প্রয়োজন হয় তখন বইয়ের পাশাপাশি ইন্টারনেটের ওপর আমরা ভরসা করে থাকি। সে ক্ষেত্রে সিলেট বিভাগের তথ্যগুলো খুঁজতে গিয়ে মন খারাপ হয়। অনলাইনে যদিও কিছু তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু সেগুলোর বিস্তারিত কোনো তথ্য নেই। এ থেকেই আমার একটা চিন্তার শুরু সিলেটপিডিয়া নিয়ে।

উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী মৌলভীবাজার জেলার নদীর সংখ্যা ৯টি। অন্যদিকে জেলা তথ্য বাতায়নের তথ্য অনুযায়ী মৌলভীবাজার জেলার নদীর সংখ্যা পাঁচ। এখানে কণ্ঠনালা (জুড়ী) নামে একটি নদীর নাম আছে যা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী নেই। তবে বাস্তবে কণ্ঠনালা নামের একটি নদীর অস্তিত্ব আছে। কণ্ঠনালা নদীর মতো এ রকম অনেক নদী আছে যে নদীগুলোর তথ্য সংগ্রহ করা একান্ত প্রয়োজন। নাহলে কালের বির্বতনে এই নদীগুলোর নাম আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম জানতেই পারবে না আমাদের সিলেট বিভাগে কতগুলো বহমান নদী ছিল এবং তাদের অবস্থান। সিলেটে বিভাগের ইতিহাস ঐতিহ্যর অনেক বিষয় সম্পর্কে এরকম অনেক বিষয়ে গরমিল আছে সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা গবেষণার মাধ্যমে সঠিক তথ্য তুলে নিয়ে আসতে চাই।

আরেকটু উদাহরণ দিলে হয়তো পাঠকরা সহজেই বুঝতে পারবেন, একজন গবেষক ‘বাংলাদেশের নদ-নদী’ শীর্ষক গ্রন্থটির (জুলাই ২০১৭-এ অনুশীলন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত), পৃষ্ঠা ৫৯-এ তিনি মনু নদী নিয়ে লিখতে গিয়ে বলেছেন যে, নদীটি উত্তর-পশ্চিমমুখী এবং পরবর্তীকালে পশ্চিমমুখী পথে প্রবাহিত হয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ধলাই নদীতে পতিত হয়েছে। কিন্তু বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে আমরা দেখতে পেয়েছি যে, মনু নদী উত্তর-পশ্চিমমুখী ও পরে পশ্চিমমুখী পথে প্রবাহিত হয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মনুমুখ বাজারের কাছে কুশিয়ারা নদীতে পতিত হয়েছে।

এই কাজগুলো নিয়ে যাতে নির্ভুল তথ্য তুলে নিয়ে আসতে পারি সে জন্য ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর গবেষণা পদ্ধতিতে বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করেছি।’

সিলেটপিডিয়া নিয়ে আপনার আশা কি? জানতে চাইলে শুভ বলেন, আমি স্বপ্ন দেখি সিলেটপিডিয়া হবে সিলেট বিভাগের একটি পূর্ণাঙ্গ তথ্য ভাণ্ডার। যেখান থেকে প্রতিটি ইউনিয়নের তথ্যের পাশাপাশি প্রসিদ্ধ গ্রাম থেকে শুরু করে তথ্যের বিন্যাস করা চিন্তা আছে আমাদের। অনেকেই মনে করে সিলেট বিভাগের ইতিহাস হযরত শাহ জালালা (র.) থেকে শুরু। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। সিলেটের অনেক পুরনো ইতিহাস রয়েছে, সে বিষয়গুলোও আমরা তুলে আনব।

সিলেট বিভাগ ছাড়াও অন্যান্য বিভাগ নিয়ে কাজ করতে চান তিনি। ‘সিলেট নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। তবে সিলেটের কাজ একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর পর অন্য বিভাগ নিয়েও কাজ করার ইচ্ছা আছে আমাদের।’ যুক্ত করেন শুভ।

আর কী কী থাকছে সিলেটপিডিয়ায়? জবাবে এ উদ্যোক্তা জানান, ‌‘সিলেটে ইতিহাস ঐতিহ্য থেকে শুরু করে শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রত্নতত্ত্ব, দর্শনীয় স্থান, কৃতিব্যক্তিত্ব ও ওলী আউলিয়ার মাজার থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়ে সঠিক তথ্য তুলে নিয়ে আসতে চাই আমরা।

সিলেটপিডিয়ার ওয়েবসাইটটিতে ব্রাউজ করুন www.sylhetpedia.com

https://www.dhakatimes24.com/2020/01/16/148666/%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A4%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%B%E0%A7%9F%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%9F%E0%A6%AA%E0%A6%BF%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE

About শাহাবুদ্দিন শুভ

Read All Posts By শাহাবুদ্দিন শুভ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *