যাদুকাটা নদী

যাদুকাটা নদী বা যদুকাটা নদী বা জাদুকাটা-রক্তি নদী ( Jadukata River) বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুনামগঞ্জ জেলার একটি নদী। যাদুকাটা নদী ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় হতে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুরে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরে তাহিরপুরের মধ্যে নদীটি প্রবেশ করে ঈষৎ দক্ষিণ-পূর্বমুখী হয়ে এঁকেবেঁকে পুনরায় বিশ্বম্ভরপুরে প্রবেশ করেছে। বিশ্বম্ভরপুর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে জামালগঞ্জ উপজেলা শহরের নিকট নয়া সুরমা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এই নদীর তীরে অবস্থিত আনোয়ারপুর ও দুর্লভপুর নদীবন্দর। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৫৭ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক যাদুকাটা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ৭২।

যাদুকাটা নদীর গভীরতা ৮ মিটার এবং অববাহিকার আয়তন ১২৫ বর্গকিলোমিটার। এই নদীতে সারা বছরই পানিপ্রবাহ থাকে। তবে সাধারণত স্বল্প বন্যায় নদীর দুকুল প্লাবিত হয়।

ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে আসা ১৮টি পাহাড়ি ছড়ার মাধ্যমে বর্ষায় দেখা যায় চোখ জুড়ানো পাহাড়ি ঝরনা। পাহাড়ি নদীর সঙ্গে যুক্ত আছে শাহ আরেফিন আউলিয়ার আস্তানা, হিন্দু সম্প্রদায়ের পূন্যতীর্থ ও সাতশ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন বারেক টিলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য। পাশেই আছে দেশের বৃহত্তর শিমুল বাগান। এক সঙ্গে একাধিক সৌন্দর্য দেখার মত স্থান। তাই এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশ থেকেও এসে ভিড় করছে শত শত পর্যটক। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়ের বুক চিড়ে পাহাড়ি ঝরনার পানি মিলিত হয়েছে সীমান্ত নদী যাদুকাটায়।

সীমান্তবর্তী নদী যাদুকাটার যেন রূপের শেষ নেই। এই রূপে মুগ্ধ হচ্ছেন হাজার হাজার দর্শনার্থী ও পর্যটক। প্রায় সারা বছরই পর্যটকদের মিলনমেলায় পরিণত হয় যাদুকাটা নদীর তীর। দিন যতই যাচ্ছে বাড়ছে যাদুকাটা নদীর প্রতি সৌন্দর্য পিপাসুর সংখ্যাও বাড়ছে। যাদুকাটা নদী থেকে বালু, পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন হাজার হাজার শ্রমিক।

যাদুকাটা নদীর পশ্চিতীরে বড়দল ইউনিয়নে সুনামগঞ্জের আইফেল টাওয়ার খ্যাত বারেক টিলা। পাশেই হলহলিয়া গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে প্রাচীন লাউড় রাজ্যে ৮০০ বছরের পুরোনো হাবেলির রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ।

যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী বাজার ও বন্দ সমূহ :
সাচনা বাজার, আনোয়ারপুর ও দুর্লভপুর নদীবন্দর

নদীর দৈর্ঘ্য :
নদীর দৈর্ঘ্য ৩২ কিমি
অববাহিকার আয়তন ১২৫ বর্গ কিমি

পানি প্রবাহের পরিমাণ :
৪ মার্চ ২০১১ তারিখের মাঠ জরিপের তথ্য অনুযায়ী পানি প্রবাহের পরিমাণ ১৭.১ কিউবিক মি:/সেকেন্ড পাওয়া যায়

নৌ-রোড :
নদীটি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃক নির্ধারিত ৪র্থ শ্রেণীর নৌ-পথ।

নদী নং :
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক বিবিয়ানা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ৭২ ।

তীরবর্তী ধর্মীয় স্থান :
শাহ আরেফিন আউলিয়ার আস্তানা, হিন্দু সম্প্রদায়ের পূন্যতীর্থ

শাহাবুদ্দিন শুভ

তথ্যসূত্র
১. বাংলাদেশের নদীকোষ, ড. অশোক বিশ্বাস, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩২৭-৩২৮।
২.বাংলাদেশের নদ নদী , ম ইনামুল হক, জুলাই ২০১৭, অনুশীলন, পৃষ্ঠা ৫৪
৩. সম্ভাবনার আরেক নাম যাদুকাটা নদী, ইত্তেফাক, ২১ জুন, ২০১৯
৪. বাংলাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ড ওয়েবসাইট ০৬.১০.২০১৯
৫. জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ওয়েবসাইট ০৬.১০.২০১৯
৬. সুনামগঞ্জ জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য, আবু আলী সাজ্জাদ হোসাইন, ডিসেম্বর ১৯৯৫, পৃষ্ঠা ২৮৮
৭.বাংলাদেশ ভ্রমণসঙ্গী, মোস্তফা সেলিম, মার্চ ২০১১, পৃষ্ঠা ২০১৪
৮.যাদুকাট নদীর ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

About শাহাবুদ্দিন শুভ

Read All Posts By শাহাবুদ্দিন শুভ

1 thought on “যাদুকাটা নদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *