সোনাই নদী নামে দেশে তিনটি নদী রয়েছে যার তিনটি নদীই সীমান্ত নদী। সিলেট বিভাগের দুটি নদীর মধ্যে একটি নদী সিলেটের বিয়ানীবাজার ও মৌলভীবাজারের বড়লেখায় অন্যটি হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং মাধবপুরের খাস্তি নদীতে পতিত হয়েছে। আর অন্য নদীটি সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়াতেই বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ইছামতী নদীতে পতিত হয়েছে।
সোনাই নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। সোনাই নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর এটি মাধবপুর উপজেলার খাস্তি নদীতে পতিত হয়েছে। মাধবপুর নদী বন্দর সোনাই নদীর তীরে অবস্থিত। বাংলাদেশে নদীটি প্রবাহ পথের দৈর্ঘ্য ২৪ কিমি, প্রস্থ ২৫০ মিটার যা মনতলায় পরিমাপকৃত এবং গভীরতা ৫ মিটার। সোনাই নদীর অববাহিকার আয়তন ১২০ বর্গকিলোমিটার।
বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে ত্রিপুরার তেলিয়াপাড়া শহর আর তার পার্শ্ববর্তী শহর ও এলাকার পানি প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে মাধবপুরে সোনাই নদী এক সময় যে পরিমাণ পানি ও পলি বহন করে নিয়ে আসত এখন আর সে অবস্থানে নেই। সোনাই নদীর আজ জীর্ণ শীর্ণ মরণ দশা । অথচ একসময় সোনাই নদীর কারণেই মাধবপুর বন্দর ছিল। সোনাই নদীতে সারা বছর চলতো- লঞ্চ, ট্রলার ও ছোট-বড় অসংখ্য নৌকা সেখানে ৯ মাসই এই নদী থাকে স্রোতহীন। বর্ষায় তিন মাস কিছু পানি থাকে এবং অল্প কিছু নৌকার চলা চল দেখা যায়।
হবিগঞ্জ জেলার মাধাবপুর উপজেলার পূর্বাঞ্চলে শুরু হয়েছে চা বাগান। এখানকার তেলিয়াপাড়ার বেশ কয়েক কিমি দক্ষিণে মনতলার অবস্থান। ঢাকা- সিলেট রেল লাইনে রয়েছে মনতলা স্টেশন তার পর তেলিয়াপাড়া স্টেশন। মাধবপুর ও ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা সদরের সীমানা নির্দেশক এই মনতলা। মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে এই মনতলা ও তেলিয়াপাড়াকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধা সেনা সদস্য ও কমান্ডারগণ সমবেত হন। আর এ এলাকাতেই নয়মাস ব্যাপী কোন না কোন সময় পাকিস্তানী বাহিনী ও মুক্তিযুদ্ধাদের যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। এই গুরুত্বপূর্ণ স্থান মনতলার পাশ দিয়েই ত্রিপুরা থেকে নেমে এসেছে নিরন্তর বহমান সোনাই নদী। সোনাই পানি আর পলি বহন করে বাংলাদেশের বিল আর নিচু এলাকা ভরাট করেছে। মাধবপুর শহর আর সোনাই নদীর দক্ষিণের তীরে ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জেলাধীন দক্ষিণ পূর্ব এলাকার বিস্তীর্ণ বিলাঞ্চল আজ সোনাই নদীর পলিতে চাষ যোগ্য ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
বছরকাল ব্যাপী নদীটি পানি প্রবাহ থাকে। শুষ্ক মৌসুমে পানি দারুণভাবে কমে যায়। তখন এই নদীর পানির প্রবাহের পরিমাণ দাঁড়ায় ০.৫ ঘন মিটার / সেকেন্ড এবং গভীরতা থাকে ১ মিটার । তবে বর্ষা মৌসুমে মে-জুন মাসে পানির এই প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫.৭১ ঘন মিটার /সেকেন্ড। আর গভীরতা তখন দাড়ায় ৫ মিটার। নদীটিতে জোয়ার ভাটা চলে না। তবে সাধারণত বর্ষায় দু’কুল ছাপিয়ে বন্য হয় মাঝে মধ্যে।
মাধবপুর নদীবন্দর এই সোনাই নদীর তীরে। এই নদী অববাহিকার চৌমুহনীতে রয়েছে এলজিইডি’র একটি রাবার ড্যাম প্রকল্প এবং বহড়াতেও আছে অনুরূপ প্রকল্প।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক সোনাই নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ২৩।
পানি প্রবাহের পরিমাণ :
১. পানির প্রবাহের পরিমাণ দাঁড়ায় ০.৫ ঘন মিটার / সেকেন্ড এবং গভীরতা থাকে ১ মিটার।
২. বর্ষা মৌসুমে মে-জুন মাসে পানির এই প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫.৭১ ঘন মিটার /সেকেন্ড। আর গভীরতা তখন দাড়ায় ৫ মিটার।
নৌ-রোড :
নদীটি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃক নির্ধারিত ৪র্থ শ্রেণীর নৌ-পথ।
নদী নং :
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক সোনাই নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ২৩।
শাহাবুদ্দিন শুভ
তথ্যসূত্র
১. বাংলাদেশের নদীকোষ, ড. অশোক বিশ্বাস, গতিধারা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা – ৩৫৪
২. জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ওয়েবসাইট ২৭.০৯.২০১৯
৩. উইকিপিডিয়া
৪. বাংলাদেশের নদ নদী , ম ইনামুল হক, জুলাই ২০১৭, অনুশীলন, পৃষ্ঠা ৬০-৬১
৫.সোনাই নদী ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
1 thought on “সোনাই নদী (মাধবপুর-ব্রাক্ষণবাড়িয়া)”