মনু নদী

মনু নদী (ইংরেজি: Manu River) :: বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী প্রায় ২৬০টি আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে। বাংলাদেশে আন্তঃসীমান্ত নদীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এবং মায়ানমার থেকে ৫৮টি গুরুত্বপূর্ণ নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তার মধ্যে ভারতের সাথে ৫৫টি নদী রয়েছে। মনু তাদের মধ্যে অন্যতম।

মনু ও দেও নামে দু’টি নদী বাংলাদেশের সীমান্তের ওপাড়ের ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধলাই জেলার সর্বদক্ষিণ পাহাড়ের উত্তরমুখী ঢাল থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর মুখী ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। এবং অনেক ছড়া ও উপনদীর সাথে মিলিত হয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্যের উনকুটি জেলায় এর মিলিত হয়। এর পর উত্তরমুখী পথে কৈলাশ শহরে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের দিকে এগিয়েছে। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুরের কাছে মনু নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। প্রবাহের পর মনু প্রথমে কুলাউড়াতে উত্তর ও পশ্চিমে প্রবাহিত হয়েছে। তারপর রাজনগর থেকে কয়েক কিমি সোজ পশ্চিম মুখী প্রবাহিত হয়ে মৌলভীবাজার জেলা শহরে প্রবেশ করেছে। পরে পশ্চিমমুখী পথে প্রবাহিত হয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মনুমুখ বাজারের কাছে কুশিয়ারা নদীতে পতিত হয়েছে।

নামকরণ :
কথিত আছে হিন্দু-শাস্ত্রকার মনু এ নদীর তীরে শিবপূজা করতো ব’লে এ নদীর নাম হয়েছে মনু ।

মনু ব্যারেজ :
মৌলভীবাজার শহরতলীর মাতারকাপন এলাকায় অবস্থান মনু ব্যারেজের। বন্যার প্রকোপ থেকে কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও মৌলভীবাজার উপজেলার ১২ হাজার হেক্টর আবাদি জমি ও এলাকা রক্ষায় মনু ব্যারেজ তৈরি করা হয়। স্থানীয়দের কাছে জায়গাটি সুইচ গেট হিসেবে পরিচিত। মনু নদীর পানি শুষ্ক মৌসুমে বোরো চাষে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল এ গেট। মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার অন্তত ১০ হাজার কৃষকের বোরো আবাদ এ পানির ওপর নির্ভরশীল। মৌলভীবাজার মূল শহর থেকে মাত্র দুই মাইল পূর্বে এটি অবস্থিত।

মনু ব্যারেজ বর্তমানে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। নদীর দুই পাশে ছায়া ঘেরা মায়াবী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর মনমাতানো অপূর্ব দৃশ্য যেকোনো দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। বিশেষ করে শীতকালে এখানে সূর্য উদয় মনোরম দৃশ্য তৈরি হয়। যা অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। পড়ন্ত বিকেলে বিনোদন ও প্রকৃতি প্রেমীরা এখানে ভিড় জমান। নানা উৎসবেও মুখর হয়ে উঠে মনু ব্যারেজ। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই পশ্চিম দিকে বয়ে চলা মনু নদীর বুকে সূর্যাস্তের দৃশ্য এখানে সৃষ্টি করে মায়াবী সৌন্দর্যের। চারপাশ ভরে উঠে গোধূলির সোনালি আভায়।

পানি প্রবাহের পরিমাণ :
মার্চ ১৪, ২০১১ তারিখের মাঠ জরিপ অনুযায়ী পানি প্রবাহের পরিমাণ ২০.৩৬ কিউবিক মি:/ সেকেন্ড পাওয়া যায়।

বিপদসীমা :
১.মনু নদীতে পাউবোর মৌলভীবাজার স্টেশনে বন্যার বিপদ সীমা ১১.৭৫ মিটার।
২. মনু রেলওয়ে স্টেশনে বন্যার বিপদ সীমা ১৭.০৭ মিটার

নৌ-রোড :
নদীটি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃক নির্ধারিত ৪র্থ শ্রেণীর নৌ-পথ।

উৎস : ভারত
প্রবাহিত জেলা : মৌলভীবাজার, সিলেট,
প্রবাহিত উপজেলা : কুলাউড়া, রাজনগর, মৌলভীবাজার সদর ও বালাগঞ্জ
নদীর দৈর্ঘ্য : নদীর দৈর্ঘ্য ৮৩ কিলোমিটার
প্রশস্ত : গড় ১১১ মিটার
অববাহিকার আয়তন : ৫০০ বর্গ কিমি
প্রকৃতি : সর্পিল আকার
বন্যা প্রবণতা : বন্যা প্রবণ
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ : প্রযোজ্য নয়
অববাহিকার প্রকল্প : মনু নদী ব্যবস্থা, তারাপাশা প্রেম নগর প্রকল্প।
পানি প্রবাহের পরিমাণ : ১.৩৪ কিউবিক (মাঠ জরিপ, মার্চ ৮, ২০১১
নদী নং : বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক মনু নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ৬৬ ।

  • শাহাবুদ্দিন শুভ

তথ্যসূত্র
১. বাংলাদেশের নদীকোষ, ড. অশোক বিশ্বাস, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ২৯৯,৩০০
২. বাংলাদেশের নদনদী বর্তমান গতিপ্রকৃতি, মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, কথা প্রকাশ, আগস্ট ২০১৯, পৃষ্ঠা ২১৫,২১৬
৩. বাংলাদেশের নদ নদী , ম ইনামুল হক, জুলাই ২০১৭, অনুশীলন, পৃষ্ঠা ৫৯
৪. বাংলাদেশের নদ-নদী ও নদীর তীরবর্তী জনপদ, ড. মো. আবু হানিফ শেখ, অবসর, ফেব্রুয়ারি ২০১৬, পৃষ্ঠা ১২৮
৫. বাংলাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ড ওয়েবসাইট ২২.০৯.২০১৯
৬. জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ওয়েবসাইট ২২.০৯.২০১৯
৭. শ্রী হট্টের ইতিবৃত্ত পূর্বাংশ – অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি, পৃষ্ঠা ৩৯ প্রকাশক – মোস্তফা সেলিম, উৎস প্রকাশন ২০১৭
৮.মনু নদীর ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

Facebook Comments Box

About শাহাবুদ্দিন শুভ

Read All Posts By শাহাবুদ্দিন শুভ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *