খোয়াই নদী (Khowai River) খরস্রোতা খোয়াই একটি সীমান্ত নদী। খোয়াই নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আঠারপুড়া পাহাড়ের পূর্বাংশে উদ্ভূত হয়ে প্রথমে পশ্চিম এবং পরে উত্তর দিকে প্রবাহিত হওয়ার পর হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা নামক স্থান দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাল্লা সীমান্তে নদীর এপাড় বাংলাদেশ আর ওপাড় ভারত। বাল্লা থেকে হবিগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলো মিটার আকঁবাকাঁ পথ পাড়ি দিয়ে খোয়াই নদী ভাটিতে মাদনা নামক স্থানে শাখা বরাক নদীর সাথে এক হয়ে খুশিয়ারা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বাংলাদেশের মধ্যে নদীটির দৈর্ঘ্য ৯৪ কিমি। নদীটি শায়েস্তাগঞ্জের কাছে ৭০ মিটার প্রশস্ত। পানির সর্বোচ্চ গভীরতা ৬ মিটার। আর অববাহিকার আয়তন ৪৩৫ বর্গ কিমি। অন্য এক তথ্য থেকে জানা যায় কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার খায়েরপুর- আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের দিকে খোয়াই নদী কুশিয়ারায় পতিত হয়েছে। তবে আজমিরিগঞ্জ বাজার থেকে দক্ষিণ দিকে কুশিয়ারা নদীটি স্থানীয়ভাবে মেঘনা নামেই বহুল পরিচিত।
নামকরণ :
ভারতের খোয়াই এলাকার ভেতর দিয়ে নদীটি বাংলাদেশে এসেছে বলে ঐ এলাকার নামানুসারে এর নাম করণ করা হয়েছে “খোয়াই” ।
খোয়াই নামের উৎপত্তি সম্পর্কে একটি কিংবদন্তি আছে :
খোয়াই নদীর প্রাচীন নাম ক্ষমা বা ক্ষেমা । ক্ষেমা নাম করণের পেছনে একটি জনপ্রবাদ রয়েছে। একবার এক ভিনদেশী বণিক তার পানসী নৌকা নিয়ে এই নদীর তীরে নোঙ্গর করে ফেলে খাসিয়াদের একটি পূজা উৎসব উপভোগ করছিল। যুবকের রূপে মুগ্ধ হয়ে অভিজাত এক খাসিয়া কন্যা তাকে ভালবেসে বিয়ে করার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করে । কিন্তু খাসিয়া সম্প্রদায় তাকে নিজেদের সম্প্রদায়ের একজন যুবকের সাথে ঐ কন্যার বিবাহ দিলে ক্ষেমা বা ক্ষাম নামের ঐ খাসিয়া কন্যা নদীতে আত্মাহুতি দেন । সেই থেকে এই নদীর নাম ক্ষেমা বা ক্ষমা।
হবিগঞ্জ শহরে গাঁ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া খোয়াই নদীকে এক সময় ‘হবিগঞ্জের দু:খ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হত। নদীর জন্য হবিগঞ্জ শহর সম্প্রসারণ করা সম্ভব ছিল না। ১৯৭৮ সালে ‘ মাছুলিয়া-রামপুর প্রকল্প ” অধীনে স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে শহর বাসীর দু:খ ঘোচানো হলেও নদীর নাব্যতা হ্রাস পায়। ফলে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সহজেই বন্যা দেখা দেয়।
উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের সাথে প্রচুর পরিমাণে পলি আসে যার ফলে নদীর গভীরতা আগের তুলনায় অনেকাংশে কমে গেছে। বর্ষাকালে নদীর দু’তীর উপচে পানি প্লাবন ভূমি দিয়ে প্রবাহিত হয়। আকস্মিক বন্যার হাত থেকে হাওড় ও ফসল রক্ষার জন্য দু’তীরেই প্রায় ২০ কিলোমিটার করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডুবন্ত বাধ রয়েছে।
পানি প্রবাহের পরিমাণ :
মার্চ ১৪, ২০১১ তারিখের মাঠ জরিপ অনুযায়ী পানি প্রবাহের পরিমাণ ৭.১৬ কিউবিক মি:/ সেকেন্ড পাওয়া যায়।
বিপদসীমা : খোয়াই নদীতে পাউবোর হবিগঞ্জ স্টেশনে বন্যার বিপদ সীমা ৯.৫ মিটার।
নৌ-রোড : নদীটি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃক নির্ধারিত ৪র্থ শ্রেণীর নৌ-পথ।
“পাউবো” পরিচিতি নম্বর : বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক খোয়াই নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ২২।
প্রবাহিত জেলা : হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ
প্রবাহিত উপজেলা : চুনারুঘাট, বাহুবল, বানিয়াচং, হবিগঞ্জ সদর, লাখাই ও অষ্টগ্রাম
তীরবর্তী স্থাপনা : শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা, হবিগঞ্জ পৌরসভা, চুনারুঘাট পৌরসভা ।
নদীর দৈর্ঘ্য : ৯৪ কিলোমিটার
প্রশস্ত : গড় ১০৬ মিটার
অববাহিকার আয়তন : ৪৩৫ বর্গ কিমি
প্রকৃতি : সর্পিলাকার
বন্যা প্রবণতা : বন্যা প্রবণ
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ : প্রযোজ্য নয়
অববাহিকার প্রকল্প : খোয়াই নদী ব্যবস্থা গাংজুরি প্রকল্প
ব্যারাজ বা রেগুলেটর : প্রযোজ্য নয়।
- শাহাবুদ্দিন শুভ
তথ্যসূত্র
১. বাংলাদেশের নদনদী বর্তমান গতিপ্রকৃতি, মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, কথা প্রকাশ, আগস্ট ২০১৯, পৃষ্ঠা ১৮৪
২. বাংলাদেশের নদীকোষ, ড. অশোক বিশ্বাস, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ১৭৬-১৭৭
৩. বাংলাদেশের নদ-নদী, ম ইনামুল হক, জুলাই ২০১৭, ১৪০-১৭৬ পৃষ্ঠা
৪. আমাদের নদ-নদী, মাহবুব সিদ্দিকী, আগামী প্রকাশনী, ফেব্রুয়ারি ২০১৭, পৃষ্ঠা ১৩৯- ১৪০
৫. বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা হবিগঞ্জ , পৃষ্ঠা ২৮-২৯, প্রকাশক – বাংলা একাডেমি, জুন ২০১৪
৬ . শ্রী হট্টের ইতিবৃত্ত পূর্বাংশ – অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি, পৃষ্ঠা ৩৯ প্রকাশক – মোস্তফা সেলিম, উৎস প্রকাশন ২০১৭
৭. খোয়াই নদীর ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত