মেজর জেনারেল (অব:) এম এ রব বীর উত্তম ( Mohammad Abdur Rab) ১৯১৯ সালে বানিয়াচঙ্গ উপজেলার খাগাউড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোনওয়ার এবং মাতা মোছাম্মৎ রাশেদা বেগম। তিন ভাইয়ের মধ্যে রব ছিলেন সবার বড়। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর অসাধারণ মেধার অধিকারী আবদুর রব হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৩৫ সালে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এর পর সিলেট এম সি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে আইএসসি ও বিএসসি এবং আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪২ সালে ভূগোল শাস্ত্রে এম এ ডিগ্রী লাভ করেন।
সেনাবাহিনীর জীবন :
এম এ রব ১৯৪৩ তদানীন্তন ব্রিটিশ-ভারত সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৪৪ সালে সেনাবাহিনীতে কমিশন্ড লাভের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে বার্মার আরাকান সীমান্তে সরাসরি রণক্ষেত্রে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন । জাপানের পতনের পর তাঁর সেনা বাহিনী ( ২৬ নম্বর ব্রিটিশ ভারতীয় সামরিক ডিভিশন) যুদ্ধ ক্ষেত্র হতে ব্যাঙ্গালোর গমন করেন। কিছুদিন পর সামরিক ডিভিশনকে দখলদার বাহিনী হিসেবে ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানো হয়। সেখানে ইউনিট কমান্ডে কৃতিত্বের পরিচয় দেওয়া সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রমোশন প্রদান করা হয়। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে তিনি তার বাহিনীসহ লাহোরে চলে আসেন এবং ৮৫ হাজার অমুসলিম শরণার্থীদের অবরুদ্ধ এলাকা থেকে উদ্ধার করে বিশেষ ট্রেন যোগে ভারত পাঠান। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পর লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে থাকাকালে ১৯৭০ সালে অবসর গ্রহণের পর রাজনীতিতে যোগ দেন।
রাজনৈতিক জীবন
একই বছর তিনি আওয়ামীলীগ প্রার্থী হিসাবে বানিয়াচঙ্গ-নবীগঞ্জ ও আজমিরিগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা হতে জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে তিনি পুনরায় জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে তিনি কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগদান করেন।
মুক্তিযুদ্ধ :
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে প্রতিরোধ সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ২৫ শে মার্চ কালরাত্রির সংবাদ পেয়ে তিনি স্থানীয় স্থানীয় নেতৃবৃন্দে সাথে পরামর্শক্রমে পরবর্তী কর্মসূচি প্রণয়নে সচেষ্ট হন। ৪ এপ্রিল মাধবপুর থানার তেলিয়াপাড়া চা বাগানে যে ঐতিহাসিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় , উক্ত বৈঠকে কর্নেল ওসমানী এবং লে. কর্নেল এম এ রব একাধারে সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা ও এমএনএ হওয়ায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে মুক্তি যুদ্ধের সহ সর্বাধিনায়ক মনোনীত হন।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ পদে নিযুক্ত হন এবং প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জেনারেল ওসমানীর হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে মেশিনগানের গুলি বর্ষিত হলে তার সঙ্গী মেজর জেনারেল আব্দুর রব গুরুতর আহত হন। চরম বিপজ্জনক পরিস্থিতি ও বিপত্তির মুখে দায়িত্ব পালনে অসাধারণ শৌর্যবীর্যের জন্য মুক্তিযুদ্ধের পর সরকার তাকে “বীর উত্তম” খেতাব দান করেন। ১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ পদে বহাল ছিলেন।
সম্মাননা :
অবসর গ্রহণ তালিকা সংশোধনের পর তাকে অবৈতনিক মেজর জেনারেল পদ মর্যাদা দান করা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন ও পরিচালনার দায়িত্ব তিনি সফলভাবে পালন করেন। এই ট্রাস্ট এবং এর সুফল প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাগণ তার নিরলস ও নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টার কাছে ঋণী।
মৃত্যু :
মেজর জেনারেল (অব:) এম এ রব আমাদের জাতীয় ইতিহাসে চিরস্মরণীয় নাম। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে তাঁর শরীর অসুস্থ হতে থাকে। ১৯৭৫ সালের ১৪ নভেম্বর রোজ শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর বেলা ২.২০ ঘটিকায় ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। পরদিন হেলিকপ্টার যোগে জেনারেল এম এ জি ওসমানী তাঁর মরদেহ নিয়ে হবিগঞ্জে আসেন এবং তাকে শহরতলীর উমেদ নগরস্থ কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
তথ্য সূত্র :
১. উইকিপিডিয়া
২. ইন্টারনেট
৩. মুক্তিযুদ্ধে হবিগঞ্জ , মুহম্মদ সায়েদুর রহমান, পৃষ্ঠা ২০৯, ২১০, উৎস প্রকাশন
৪. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সেক্টর ভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ৪, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মার্চ ২০০৬, পৃষ্ঠা ১২,