সোমেশ্বরী নদী ( ধর্মপাশা, সুনামগঞ্জ ) : সোমেশ্বরী নামে বাংলাদেশে ৩টি নদী রয়েছে যার মধ্যে একটি সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অপর ২টি নদী নেত্রকোনা জেলার দুর্ঘাপুরে এবং অন্যটি শেরপুর জেলা শ্রীবর্দী-ঝিনাইগাতিতে। সোমেশ্বরী নদীটি সীমান্ত নদী হিসেবে পরিচিত। ভারতে উৎপত্তি লাভ করে এ নদী সুনামগঞ্জ জেলাধীন ধর্মপাশা উপজেলার উত্তর বংশীকুণ্ডা ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর পর নদীটি ধর্মপাশা উপজেলার দক্ষিণ বংশীকুণ্ডা, চামারদানী, জয়শ্রী ও দক্ষিণ সুখায়ের রাজাপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারডাক ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে বাউলাই (বালুয়া) নদীতে পতিত হয়েছে। এ নদীর গতিপথে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নে উপদাখালী নদীটি মিলিত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে মাটির বাঁধ দিয়ে এ নদীর পানির প্রবাহ রুদ্ধ করে স্থানীয়ভাবে সেচের কাজে ব্যবহার করা হয়। পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে নদীর অববাহিকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। এই পাহাড়ি ঢলে পরিবাহিত পলির কারণে নদীর তলদেশ ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রশস্ততা হচ্ছে সঙ্কুচিত। পাহাড়ি ঢল ছাড়াও পানি বহনের সক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় বর্ষার সময় এর অববাহিকা বন্যার পানিতে প্রায়ই প্লাবিত হয়। নদীতে ছোট আকৃতির ট্রলার ও নৌযান চলাচল করে থাকে।
এই নদীতে অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। সেসব চরে মানুষ বসবাসও শুরু করেছে। তারা সেসব চরে চাষাবাদ করছে। নদীটি অতীতের মতো এখন আর নাব্য নয়, বরং এটা ছোট্ট খালে রূপান্তরিত হয়েছে। নদীর দুধারের দিয়াড়া জমিতে ফসল উৎপাদিত হচ্ছে।
নদীটির বাংলাদেশ সীমানাংশের মধ্যে দৈর্ঘ্য ৬৭ কিমি। প্রস্থ বিজয়পুরের নিকট নদীটির ৮০০ মিটার। এখানে গভীরতা ৮ মিটার। নদীটির অববাহিকার আয়তন ১১৯৭ বর্গ কিমি।
নদী সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক তথ্য
উৎসমুখ : ভারত।
পতিতমুখ: বাউলাই /বৌলাই, বালুয়া নদী- জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ।
প্রবাহিত জেলা: সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা।
প্রবাহিত উপজেলা: ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জ।
দৈর্ঘ্য: প্রায় ৬৭ কিলোমিটার।
প্রশস্ততা: গড় ১০৩ মিটার।
প্রকৃতি : সর্পিলাকার।
প্রবাহের প্রকৃতি : মৌসুমি।
জোয়ার-ভাটা: প্রভাবিত নয়।
বন্যাপ্রবণতা : বন্যাপ্রবণ।
অববাহিকার প্রকল্প: সোনা মোড়ল হাওর প্রকল্প, চন্দ্রা সোনারখাল হাওর প্রকল্প।
তীরবর্তী স্থাপনা: মহেশখোলা হাট, বিশরপাশাবাজার।
ব্যারাজ বা রেগুলেটর : প্রযোজ্য নয়।
বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ: প্রযোজ্য নয়।
পরিচিতি নং : NE 86
লেখা : শাহাবুদ্দিন শুভ
তথ্যসূত্র :
১. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি, কথাপ্রকাশ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, পৃষ্ঠা ২২৯-২৩১ ।
২. বাংলাদেশের নদ নদীর সংজ্ঞা ও সংখ্যা, সেপ্টেম্বর ২০২৩, পৃষ্ঠা ৭৫-৭৬
৩.ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩৫৬-৩৫৭ ।
৪. বাংলাদেশের নদ নদী : ম ইনামুল হক, অনুশীলন , জুলাই ২০১৭, পৃষ্ঠা ৫৩-৫৪
৫. ছবি ও মানচিত্র, সংগৃহীত।
আরো পড়ুন