আজমিরীগঞ্জ উপজেলা

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা Ajmiriganj Upazila : আজমিরিগঞ্জ উপজেলা (হবিগঞ্জ জেলা) হাওর বেষ্টিত ভাটি বাংলার একটি জনপদ এই আজমিরীগঞ্জ। যার পশ্চিম পাশ ঘেষে বয়ে গেছে সুরমা-কুশিয়ারার মিলিত স্রোত কালনি-কুশিয়ারা- ভেড়ামোহনা। বছরের অর্ধেক সময় জলমগ্র থাকে অধিকাংশ এলাকা। এর আয়তন: ২২৩.৯৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২৭´থেকে ২৪°৪০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০৯´ থেকে ৯১°২৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে শাল্লা ও বানিয়াচং উপজেলা, দক্ষিণে বানিয়াচং ও মিটামইন উপজেলা, পূর্বে বানিয়াচং উপজেলা, পশ্চিমে ইটনা উপজেলা।

১৯০৭ সালে আসাম সরকার এর অধীনে আজমিরীগঞ্জ থানায় পরিণত হয়। ১৯৮৩ সালে আজমিরীগঞ্জ থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। শহরটিতে বেশ কয়েকটি কাঠামোগত সুন্দর বাড়ী রয়েছে, যা ১৮০০ সালের আগে থেকেই ছিল, ত্রিপুরার মহারাজা দ্বারা এইগুলির অর্থায়ন করা হয়েছিল।

নামকরণ : আজমিরীগঞ্জ-এর প্রাচীন নাম আবিদাবাদ। আবাদ ও বাদ হতে আবিদাবাদ। আবাদ মানে চাষাবাস এবং বাদ মানে বসবাস। আবাদ করে বসবাস শুরু করে। ফলে নাম হয় আবাদবাদ, যার অপভ্রংশ আবিদাবাদ। আজমিরিগঞ্জ নামকরণ নিয়ে একাধিক প্রবাদ প্রচলিত আছে। কথিত হয়, আজমির হতে কিছু লোক এসে এখানে ধর্মপ্রচার করার জন্য একটি আস্তানা গাড়েন। তাদের আস্তানাকে ঘিরে একটি বাজার গড়ে উঠে। বাজারটির নাম হয় আজমিরিগঞ্জ। এ বাজার হতে এলাকার নাম হয় আজমিরিগঞ্জ। অনেকে মনে করেন একজন বীর আলোচ্য এলাকাটি জয় করে নাম দেন আজমর্দন। এ আজমর্দন হতে এলাকার নাম হয় আজমিরিগঞ্জ।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা

পৌরসভাইউনিয়নমৌজাগ্রামজনসংখ্যা
শহর
জনসংখ্যা
গ্রাম
(প্রতি বর্গ কিমি)
৬৬ ১৩৩ ১৪৯০০ ৯৯৩৬৫ ৫১০

উপজেলা শহর

আয়তন (বর্গকিমি)মৌজালোকসংখ্যাঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি)শিক্ষার হার
৫.৭৪ (২০০১) ১৫৪৭ ২৫০৫ (২০০১) ৩৫.৬

আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়ন সমূহের তথ্য

ইউনিয়নের নাম
ও জিও কোড
আয়তন (একর)পুরুষমহিলাশিক্ষার হার (%)
আজমিরিগঞ্জ ১৩ ৩৩০৪ ৪৩৫১ ৪৫১৪ ২৮.২
কাকাইলসিও ৬৭ ৭৬১১ ১৪৪৮০ ১৪৫৬৭ ৩৯.২
জলশুকা ৫৪ ৬১৬১ ৮০২৪ ৮১৫৭ ৩৬.২
বাদলপুর ২৭ ১৭৪৬১ ১১১৯৭ ১১১৪৩ ৩৭.২
শিবপাশা ৮১ ৯৪১৪ ১১৯২২ ১২৫৫৭ ৩৩.৯

মুক্তিযুদ্ধ :

জগৎজ্যোতি দাস ও দাস পার্টি : ১৯৭১ সালের ১৬ নভেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর প্রায় ১৮ ঘণ্টা সম্মুখ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। পাক ক্যাম্প থেকে মাত্র ২০০ গজ দুরে রাজাকার/পাক সেনাদের আক্রমণে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে দাস পার্টি। রণাঙ্গণে পরিস্হিতির ভয়াবহ চিন্তা করে এক পর্যায়ে জ্যোতি তার দলকে ফিরে যাবার নির্দেশ দিয়ে একটি মাত্র এলএমজি নিয়ে নিজে একাই যুদ্ধ চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন । এজন্য জ্যোতি সহযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মমিনকে নির্দেশ দেন যাতে অন্যরা তাদের জীবন বাঁচিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যায় । এরপর দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন মাত্র দুইজন, জ্যোতি ও ইলিয়াছ। সুস্থির এবং দৃঢ় মনোবলের সঙ্গে তারা যুদ্ধ করতে থাকে একটানা কিন্তু হঠাৎ ইলিছাস পাঁজরে গুলিবিদ্ধ হন। জ্যোতি পিছু না হটে তার মাথার লাল পাগড়ি খুলে শক্ত করে ইলিয়াসের বুকে‌ এবং পিঠে বেঁধে দেয়, যাতে তার রক্তক্ষরণ থেকে যায়। ইলিয়াছ সেই অবস্থায় মেশিনগান নিয়ে ক্রমাগত গুলি ছুড়তে থাকে পাক হানাদারদের ওপর। যুদ্ধের এক পর্যায়ে ম্যাগজিন লোড করে শত্রুর অবস্থান দেখতে মাথা উঁচু করতে মুহুর্তে ১টি গুলি জগৎজ্যোতির চোখে বিদ্ধ করে। মেশিনগান হাতে উপুড় হয়ে পাশের বিলের পানিতে নিশ্চল হয়ে ঢলে পড়েন জ্যোতি । পাকবাহিনীর সহযোগী রাজাকারেরা রাতে জ্যোতির লাশ খুজে পেয়ে পাকবাহিনীকে খবর দেয় এবং জ্যোতির মৃতদেহটি আজমিরীগঞ্জ বাজারে নিয়ে যায়। রাজাকাররা জ্যোতি হত্যার ঘটনা ছড়িয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য জ্যোতির অর্ধমৃত দেহ কে আজমিরীগঞ্জ গরুর হাটে একটি খুঁটির সঙ্গে ঝুলিয়ে পেরেক মেরে জনসমক্ষে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। হাফপ্যান্ট ও গেঞ্জি পরা জ্যোতির নিথর দেহটি কোন সৎকার ছাড়া ঝুলে থাকে । এক সময় জ্যোতির দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয় কুশিয়ারা নদীতে। জগৎজ্যোতির বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের কাহিনী সিলেটের সেই অঞ্চলের মানুষের কাছে এখনে মুখে মুখে ফেরে। এতে জগৎজ্যোতি দাস শহীদ হন। এছাড়া পাকিস্তানি বাহিনী উপজেলার ১১ জন গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

আজমিরীগঞ্জ-শেরপুর নদীপথে আক্রমণ (ডিসেম্বর প্রথম সপ্তাহ ‘৭১) :
আজমিরীগঞ্জ-শেরপুর নদীপথ ব্যবহার করে পাকিস্তানি বাহিনী হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করত। আর সে কারণে এ নদীপথ বন্ধ করে দেয়া মুক্তিবাহিনীর জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। আজমিরীগঞ্জ থানা আক্রমণের পর আজমিরীগঞ্জ-শেরপুর নদীপথে পাকিস্তানি মিলিশিয়া ও রাজাকারদের আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন ছালেহ চৌধুরী। বৃষ্টির কারণে এ অভিযানটি সফল হয়নি। ছালেহ চৌধুরী নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করে আবদুল মজিদের নেতৃত্বে ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে রাজাকারদের ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হন। রাজাকাররা আগে থেকেই ছালেহ চৌধুরীর বাহিনীর প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখছিল, তাই গন্তব্যস্থলে পৌঁছার পূর্বেই রাজাকারদের মুখোমুখি হতে হয়। চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও অসীম সাহসিকতার সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের পর রাজাকার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে মজিদ, রামনাথ ও জয়নুল আবেদীন সাহসী ভূমিকা রাখেন।

শিক্ষার হার গড় হার ৩৭.১%; পুরুষ ৩৯.৫%, মহিলা ৩৪.৭%। (১৮৭৬), পাহাড়পুর বসন্তকুমার উচ্চ বিদ্যালয়।

উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : কলেজ ২, মাধ্যামিক বিদ্যালয় ৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৮, কিন্ডার গার্টেন ১, মাদ্রাসা ৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: জলসুখ কৃষ্ণগোবিন্দ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত : উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স : ০১ টি, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৩ টি

জলাশয় প্রধান নদী: কালনী, কুশিয়ারা ও কৈখাল। ঘানিয়াভাঙ্গা বিল, বাঘা বিল ও দীঘা বিল উল্লেখযোগ্য।

হাটবাজার ও মেলা : হাটবাজার ৫, মেলা ৪। আজমিরিগঞ্জ, কাকাইলসিও ও শিবপাশা বাজার উল্লেখযোগ্য।

লেখা : শাহাবুদ্দিন শুভ

তথ্যসূত্র :
১. উইকিপিডিয়া
২. তথ্য বাতায়ন
৩. বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা – হবিগঞ্জ
৪. সিলেট বিভাগের প্রশাসন ও ভূমি ব্যবস্থা ,মোঃ: হাফিজুর রহমান ভূঁইয়া, সেপ্টেম্বর ১৯৯৮, পৃষ্ঠা ৭২,৪৯
৫. আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; আজমিরিগঞ্জ উপজেলার মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০১০।
৬. স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য: তথ্য বাতায়ন ১০.০২.২০২৪
৭. মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস, – সিলেট, লে. কর্ণেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, বীরপ্রতীক, বাংলা একাডেমী, এপ্রিল ২০১৮ পৃষ্ঠা ২৩০-২৩১
৮. বাংলাদেমের স্বাধীনতা যুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ৪, মার্চ ২০০৬, পৃষ্ঠা ২৪৯
৯.বাংলাদেশের জেলা ও উপজেলার নামকরণের ইতিহাস, ড. মোহাম্মদ আমীন, শোভা প্রকাশ ২০১৮, পৃ ২৭৪
১০. আজমিরীগঞ্জ উপজেলার মানচিত্রের ছবি বাংলাপিডিয়া থেকে নেওয়া।

About শাহাবুদ্দিন শুভ

Read All Posts By শাহাবুদ্দিন শুভ

1 thought on “আজমিরীগঞ্জ উপজেলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *