গোলাপগঞ্জ উপজেলার নামকরণ

গোলাপগঞ্জ উপজেলার নামকরণ ( Golapganj ) :   বাংলাদেশের সব স্থানের নামকরণের পেছনে একেকটা ইতিহাস বা কোনো ব্যক্তির নাম নিহিত রয়েছে। তেমনি গোলাপগঞ্জের নামকরণেও রয়েছে নানা ইতিহাস, জনশ্রুতি ও কিংবদন্তি। গোলাপগঞ্জ নামের উৎপত্তির ইতিহাস আজো সুস্পষ্ট নয়। এ সম্পর্কে এখনো কোনো প্রামাণ্য দলিল পাওয়া যায়নি। শুধু স্থানীয় জনশ্রুতিই এর একমাত্র উপাদান এবং তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিতর্কিত। অনেকের মতে, কোনো ব্যক্তিবিশেষের বা কোনো রাজা, বাদশাহ, স্থানীয় শাসক কিংবা অলি-আউলিয়ার নাম গোলাপগঞ্জ নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। গোলাপগঞ্জ এলাকার নামকরণ বিষয়ে ঐতিহাসিক ও কিংবদন্তিগুলো হলো :

১. হযরত শাহজালালের (র:) অন্যতম সহচর হযরত সৈয়দ বাহাউদ্দিন (র:), উপমহাদেশে বৈষ্ণব ধর্মের মহান সাধক ও সংস্কারক শ্রীচৈতন্য সহ অসংখ্য পীর আউলিয়ার পদস্পর্শে ধন্য । গোলাপগঞ্জ ও তৎসংলগ্ন বিভিন্ন অঞ্চলের নামকরণের কোন প্রামাণ্য দলিল অদ্যাবধি পাওয়া যায়নি। জনশ্রুতি ও কিংবদন্তীর উপর ভিত্তি করে গোলাপগঞ্জ উপজেলার নামকরণের ইতিহাস তুলে ধরা হলো । মুঘল শাসনামলে সম্রাট মুহম্মদ শাহ (১৭১৯-৪৮) এর রাজত্বকালে আনুমানিক ১৭৪০ সালে অল্পকালের জন্য সিলেটের দেওয়ান (রাজস্ব কর্মকর্তা) নিযুক্ত হয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে সিলেট আসেন গোলাব রাম (মতান্তরে গোলাব রায়)। এ সময় সিলেট অঞ্চলের ফৌজদার ছিলেন সমসের খান এবং বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন সুজা উদ্দিন খান । দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এই ধর্মপ্রাণ দেওয়ান গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিনে শ্রী চৈতন্যের পিতৃভূমি সম্পর্কে অবগত হন। দেওয়ানের নির্দেশে সিলেট থেকে ঢাকাদক্ষিন পর্যন্ত সড়ক ও সেতু নির্মিত হয়। এ সড়ক পথে ঢাকাদক্ষিণ এসে দেওয়ান শ্রী চৈতন্যের পিতৃভূমিতে এক মন্দির স্থাপন করেন, এর সমনে এক দীঘি খনন করান । হেতিমগঞ্জ থেকে ঢাকাদক্ষিণ গামী সড়কটি আজো দেওয়ান সড়ক নামে পরিচিত । এ সড়কে দেওয়ানের পুল নামে একটি প্রাচীন কালভার্ট আজ ও বর্তমান। ধারনা করা হয় এই দেওয়ানের নামানুসারেই সুরমা নদী তীরে গোলাবগঞ্জ নামে এক বাজার গড়ে ওঠে যা কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে গোলাবগঞ্জ নাম ধারণ করে। গোলাপগঞ্জের প্রাচীন দলিল ও রেকর্ডপত্রে গোলাবগঞ্জ নামটি এরই সাক্ষ্য বহন করে।

২. হজরত শাহজালাল (র.)-এর সিলেট আগমনের কিছুদিন পর হজরত গোলাব শাহ (র.) নামক জনৈক পীর কামেল সিলেটে আসেন। তিনি ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে সিলেট শহরের শাহপরান এলাকার পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বাঘা নামক স্থানে অবস্থান করেন। সেখানে এখনো তাঁর অনেক স্মৃতি বিদ্যমান রয়েছে। তাঁর নামে বাঘার একটি মৌজা গোলাপনগর নামকরণ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তিনি গোলাপগঞ্জ বাজারের পাশে আস্তানা স্থাপন করেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বেচা- কেনার জন্য আস্তানার পাশে একটি হাট গড়ে ওঠে, যা গোলাব হাট নামে পরিচিত। পরবর্তী সময়ে এ হাট একটি গঞ্জে রূপান্তরিত হয়ে গোলাবগঞ্জ নামে পরিচিতি লাভ করে। কালক্রমে এটি গোলাবগঞ্জ থেকে গোলাপগঞ্জ নামে পরিচিত হয়। উল্লেখ্য, গোলাব শাহ পরবর্তী সময়ে বিয়ানীবাজার থানার কসবা গ্রামে চলে যান এবং সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন।

৩. প্রাচীনকালে সুরমা নদীর তীরে গোলাপগঞ্জ বাজারের সন্নিকটে গোলাপ ফুলের প্রচুর চাষ হতো। অনেকের ধারণা, এই গোলাপ থেকেই গোলাপগঞ্জ নামের উৎপত্তি হয়েছে।

উল্লেখ্য গোলাপগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯২২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

লেখা : শাহাবুদ্দিন শুভ

তথ্য সূত্র :
১. গোলাপগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্য , আনোয়ার শাহজাহান, বইপত্র , জানুয়ারি ২০১৫
২. বাংলাদেশের জেলা ও উপজেলার নামকরণের ইতিহাস, ড. মোহাম্মদ আমীন, শোভা প্রকাশ ২০১৮,
৩. উপজেলা তথ্যবাতায়ন
৪. মানচিত্র বাংলাপিডিয়া

আরো পড়ুন

About শাহাবুদ্দিন শুভ

Read All Posts By শাহাবুদ্দিন শুভ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *