হাকালুকি হাওর ( Hakaluki Haor ) : হাকালুকি হাওরের নামকরণ নিয়ে নানা জনশ্রুতি রয়েছে। কথিত আছে ত্রিপুরার মহারাজা অমর মানিক্যের সেনাবাহিনীর ভয়ে বড়লেখার কুকি দলপতি হাঙ্গর সিং জলে পূর্ণ ও কর্দমাক্ত এক বিস্তীর্ণ এলাকায় ‘লুকি’ দেয় (লুকিয়ে থাকে)। এ থেকে উক্ত স্থানের নাম হয় ‘হাঙ্গর লুকি’। কালক্রমে ‘হাঙ্গর লুকি’ থেকে ‘হাকালুকি’ শব্দের উৎপত্তি ঘটে।
কেউ কেউ বলে থাকেন, এক সময়ে বড়লেখা উপজেলার পশ্চিমাংশে ‘হেংকেল’ নামে একটি উপজাতি বাস করতো। তাদের বসবাস এলাকার নাম ছিল ‘হেংকে লুকি’ । পরবর্তীতে এই ‘হেংকে লুকি’ই ‘হাকালুকি’-তে রূপান্তরিত হয়।আবার কারো কারো মতে, অত্র এলাকার কাছাকাছি বাস করতো কুকি ও নাগা উপজাতি। তারা তাদের ভাষায় এই হাওরের নামকরণ করে ‘হাকালুকি’।
এও বলা হয় যে, প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রচন্ড এক ভূমিকম্পে ‘আকা’ নামে এক নৃপতি ও তাঁর রাজত্ব মাটির নিচে তলিয়ে যায়। কালক্রমে এই তলিয়ে যাওয়া নিম্নভূমির নাম হয় ‘আকালুকি বা হাকালুকি’। ‘হাকালুকি’ মানে লুকানো সম্পদ। হাকালুকি খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর তাম্রফলকোক্ত ‘হাঙ্কলা কৌকিকাং পুরীং’ দ্বারা নির্দেশিত ভূভাগ বলে অনেকের অভিমত। এ ধারণা সত্য হলে তখন উহা জনপদ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা।
বিলের সংখ্যা : ছোট বড় প্রায় ২৩৫টিরও বেশি বিল নিয়ে গঠিত হাকালুকি হাওরের উল্লেখযোগ্য বিল সমূহ হলো: চাতলা বিল, চৌকিয়া বিল, ডুলা বিল, পিংলারকোণা বিল, ফুটি বিল, তুরাল বিল, তেকুনি বিল, পাওল বিল, জুয়ালা বিল, কাইয়ার কোণা বিল, বালিজুড়ি বিল, কুকুরডুবি বিল, কাটুয়া বিল, বিরাই বিল, রাহিয়া বিল, চিনাউর বিল, দুধাল বিল, মায়াজুরি বিল, বারজালা বিল, পারজালা বিল, মুছনা বিল, লামরা বিল, দিয়া বিল ইত্যাদি।
হাকালুকি হাওররে অবস্থান : বাংলাদেশের বৃহত্তর হাওর। এটি মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলায় অবস্থিত। এর ভৌগোলিক অবস্থান ২৪°৩৫´-২৪°৪৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০১´-৯২°০৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। হাকালুকি হাওরের আয়তন ১৮১.১৫ বর্গ কিমি। হাওরটি ৫টি উপজেলা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে বিস্তৃত। হাওরের ৪০% বড়লেখা, ৩০% কুলাউড়া, ১৫% ফেঞ্চুগঞ্জ, ১০% গোলাপগঞ্জ এবং ৫% বিয়ানীবাজার উপজেলার অন্তর্গত।
লেখা : শাহাবুদ্দিন শুভ
তথ্য সূত্র :
১. বাংলাদেশের হাওর, মহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার, বাংলা একাডেমি, জুন ২০২১
২. বাংলাপিডিয়া
৩. ইন্টারনেট
৪. ছবি : মাস্টারপ্ল্যান অব হাওর এরিয়া (বিএইচডব্লিউডিবি,২০১২) ও ইন্টারনেট